রিজার্ভ লোপাটে দেশি চক্র! : ৬৪০ কোটি টাকা জুয়ার বোর্ডে

 

৭ হাজার কোটি টাকা মাঝপথে রক্ষা : নজরদারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা : তদন্তে ডিবি, সিআইডি, র্যাব

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের অভ্যন্তরে কোনো একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার বাহিনী বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ পাচার করেছে। এর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছে ঘটনা তদন্তকারী সংশ্লিষ্ট সূত্র। অর্থ লোপাটের ঘটনাটি অনানুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করছে ডিবি, সিআইডি ও র্যাব। এই তিন সংস্থার একাধিক বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন যে, যেভাবেই হোক, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাটের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জড়িত। এমনকি হ্যাকার বাহিনীর সাথে ওইসব কর্মকর্তার যোগাযোগ হয়ে থাকতে পারে। সন্দেহভাজন এরকম ৮ কর্মকর্তা যাতে বিদেশ ভ্রমণ করতে না পারেন এ জন্য গোয়েন্দা সংস্থা তাদের নজরদারিতে রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৬শ’ ৪৮ কোটি টাকা (৮১ মিলিয়ন ডলার) গত ৫ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ওই দেশের রিজাল কমার্স ব্যাংকের ৫ জন গ্রাহকের হিসাবে স্থানান্তর হয়।  যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক, সিটিব্যাংক ও ওয়েলস্ ফারগো- এ ৩টি ব্যাংকের মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিলো। এ অর্থ গত বছরের মে মাসে খোলা ৫টি হিসাবে জমা করা হয়েছে। এ হিসাবগুলো ওই মে মাসেই ভুয়া তথ্য দিয়ে খোলা হয়েছিলো। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সার্ভার হ্যাক করে ৬ হাজার ৯শ’ ৯০ কোটি টাকা (৮৭০ মিলিয়ন ডলার)  ফিলিপাইনের রিজাল কমার্স ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে করে ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ ছাড় না করার নির্দেশ দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পায়।

আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন) তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা গতকাল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমেই হ্যাকার ঢুকেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে নয়। হ্যাক হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম। যেখান থেকেই হ্যাকড হোক, প্রযুক্তি বলছে যে ভাইরাস ইনফেকশন অথবা অভ্যন্তরীণভাবে পিন কোড না দিলে এই অর্থ স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। যদিও বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তের আগে কারা জড়িত থাকতে পারে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে এর সাথে তো দেশের কেউ না কেউ জড়িত থাকতে পারে।

গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার সিআইডি এবং র্যাবের পৃথক ২টি টিম বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন। ওই ২ টিমের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, অর্থ লোপাটের বিষয়টি তদন্ত করতে নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা হ্যাকিং সিস্টেম সম্পর্কে জানতে তাদের ডেকেছিলেন। বিষয়টি সিআইডি ও র্যাব আদৌ তদন্ত করতে পারবে কি-না এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা একটি ধারণা নিয়েছেন।

র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অর্থ লোপাটের ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গুরুত্বের সাথে মনিটরিং করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ঘটনাটির সাথে কেউ জড়িত থাকলে তা অতিসত্বর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি রাষ্ট্রীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই র্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও কমিউনিকেশন শাখা যৌথভাবে মনিটরিং করছে।

সিআইডি’র পুলিশ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) মির্জা আব্দুল্লাহ হেল বাকি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাটের বিষয়টি ব্যাংক থেকে সিআইডিকে জানানো হয়নি। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলেই বিষয়টি তদন্ত করা হবে।

সিআইডি’র একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লোপাটের ঘটনাটি তদন্ত করছে একটি টিম। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করা হচ্ছে না। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে ইতোমধ্যে তারা কথা বলেছেন।

র্যাবের গোয়েন্দা শাখার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, হ্যাকার বাহিনীর সাথে যোগাযোগ ছাড়া এ অর্থ স্থানান্তর করা কঠিন। বিষয়টি র্যাব অনানুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নজরদারি করা হচ্ছে।