যুক্তরাষ্ট্র সঙ্কট সমাধান না হলে প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে

মাথাভাঙ্গা মনিটর: যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ ২০০৮ এর মন্দাবস্থা থেকে বেরিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি সবে গতি পেতে শুরু করেছে। এখনি আরেকটি ধাক্কা খেলে তা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না। বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, যদি ঋণসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি নিস্পত্তি না হয়, তবে এই সঙ্কট এতটাই তীব্র হবে, যার অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্ব অর্থনীতি। ইতোমধ্যে এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের বিভিন্ন সূচক কমে গেছে। এদিকে শুধু আর্থিক বিষয়ই নয়, সম্প্রতি ক্যাপিটাল হিলের সামনে গুলির ঘটনাও যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

জানা গেছে, ১৭ অক্টোবরের মধ্যে ঋণের সিলিং উন্নীত না করলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে এবং তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই নয় বরং বিশ্ব বাণিজ্যের জন্যও ইতিবাচক হবে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রধানও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, অবিলম্বে ঋণের সিলিং না বাড়ালে এটা শুধু আমেরিকার জন্যই নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ বলেছে, মাত্র ৩০ বিলিয়ন ডলার নগদ সংস্থান করা যাচ্ছে এবং দৈনন্দিন যে রাজস্ব আসছে তা দিয়ে দেনা শোধ করার মত পরিস্থিতি নেই। সিএনএন মানির এক জরিপে অন্তত এক ডজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ঋণ না বাড়ালে মন্দা এড়ানোর কোনো সুযোগই থাকবে না।

এদিকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও তার অবস্থানে অনড় রয়েছেন। তিনি বলেন, রিপাবলিকানরা সরকারি কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে একটি বিল পাস না করলে এবং মার্কিন সরকারের ঋণ গ্রহণের সিলিং ১৬ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত না বাড়ানো পর্যন্ত তিনি বাজেট বিষয়ে আলোচনা করবেন না। তিনি বলেন, আমরা যদি একটি দলের কয়েকজন চরমপন্থি লোককে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও বিশ্বাসকে হেয়প্রতিপন্ন করার সুযোগ দিতে মাথা নত করি, তবে আমার পর যিনিই প্রেসিডেন্ট হবেন, তার পক্ষে সুষ্ঠুভাবে সরকার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। আমি তাদের সেই অনিষ্ট করার সুযোগ দিতে পারি না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, যা ঘটেছে তাতে তিনি যারপরনাই মর্মাহত। কারণ এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার কোনো প্রয়োজনই ছিলো না। এর আগে ওবামা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াল স্ট্রিটের সবচে বড় ব্যাংকগুলোর প্রধানদের সাথে আলোচনা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান অচলাবস্থাকে অর্থনৈতিক বিপর্যয় হিসেবে দেখছে বিশ্ব সংস্থাগুলোও। কারো কারো মতে, বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশটিতে ২০০৮ এর মন্দাও এমন কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেনি। আমেরিকায় স্বাস্থ্যখাতের বাজেট (যা ওবামা কেয়ার নামে পরিচিত) নিয়ে সৃষ্ট এ অচলাবস্থার মধ্যে সামাজিক অস্থিরতারও সৃষ্টি হচ্ছে। একই সাথে এ অবস্থা বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও হুমকি স্বরূপ। কারণ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে যে খেলাপি হয়ে গেলে নাটকীয় ভাবেই আরো খারাপ কিছু ঘটে যাবে।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার থেকে সৃষ্ট এ জটিলতার জন্য দেশটির সাত লাখেরও বেশি কর্মীর ভাগ্য বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কিছু সেবা কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাকস’র মতে, এ পরিস্থিতিতে সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষতি হচ্ছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হারে। কোনো কোনো সংস্থা চলতি মাসকে ঋণ সিলিঙের ডেঞ্জার জোন হিসেবেও আখ্যায়িত করেছে। ইউএস ট্রেজারির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণ বৃদ্ধির সিলিং নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে এবং তা সাধারণ ঋণ বাজারকেও স্তিমিত করে দেবে। বাড়াবে সুদের হার, কমাবে ডলারের মূল্য এবং আরেকটি মন্দার দিকে ধাবিত করবে। আর যদি তাই হয়, তবে এক জেনারেশনেরও বেশি সময় ধরে এর ভোগান্তি পোহাতে হবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশি পণ্যের একক বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ হলে, কর্মসংস্থান না হলে, আয় না বাড়লে তারা খরচ কমিয়ে দেবে। তাতে পণ্যের চাহিদাও কমে যেতে পারে। যা বাংলাদেশের রফতানি আয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদিও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী আশা প্রকাশ করেন যে, সৃষ্ট অচলাবস্থা ১৭ অক্টোবরের আগেই হয়তো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তাতে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো যাবে।