মোবাইলকোর্টে শাস্তি হবে চার বছর জেল : ১২ আইন সংশোধনে মন্ত্রিপরিষদের প্রস্তাব স্বরাষ্ট্রে

 

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কর্তৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তির পরিমাণ বাড়াতে ১২টি আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব আইনের সংশোধন করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। বিদ্যমান আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা। এখন এটিকে বাড়িয়ে চার বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অপরদিকে আধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ই-ভ্রাম্যমাণ আদালত চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য বিভাগীয় সদরে দেয়া হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ আধুনিক যানবাহন। এ আদালতের সাথে সার্বক্ষণিকভাবে যুক্ত হচ্ছে সাত সদস্যবিশিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ দল। এসব লক্ষ্যে সংশোধন করা হচ্ছে প্রায় ১০০ বছরের পুরানো ভ্রাম্যমাণ আদালতের তফসিলভুক্ত ১২টি আইন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। আর মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি তারা পেয়েছেন এবং এগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শিগগির এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ভ্রাম্যমাণ আদালতে বর্তমানে ১১৩টি অপরাধের বিচার হয়ে থাকে। জেলা প্রশাসক তথা জেলার প্রধান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অভিযোগ, আইনে শাস্তির পরিমাণ কম। ফলে সর্বোচ্চ শাস্তিপ্রাপ্তরা খুবই কম সময়ে পার পেয়ে যায়। এ কারণে একই অপরাধ বার বার সংঘটিত হচ্ছে। শক্তিশালীভাবে এসব অপরাধ দমন হচ্ছে না। একাধিক জেলা প্রশাসক এমন অভিযোগ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠির মাধ্যমে করেছেন। আর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ভ্রাম্যমাণ আদালতকে আরও কার্যকর করতে শাস্তির পরিমাণ বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পৃথক ১২টি আইন সংশোধনের জন্য ১২টি আলাদা আলাদা চিঠি দিয়েছে।

যেসব আইন সংশোধন করা হবে: মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমান নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৫২, ভবন নির্মাণ আইন ১৯৫২, চিত্তবিনোদন আইন ১৯৩৩, বাল্যবিয়ে রোধ আইন ১৯২৯, বন আইন-১৯২৭, সিনেমা আইন-১৯১৮, বিদ্যুত আইন ১৯১০, রেলওয়ে আইন ১৮৯০, জুয়ারোধ আইন-১৮৬৭, দালাল আইন ১৮৭৯, পাসপোর্ট আইন ১৯২০।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বলছেন, ১০০ বছর আগের প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট এক নয়। এখন অপরাধের ধরন প্রযুক্তির সাথে নিয়ন্ত্রিত হয়। অপরাধের সংখ্যাধিক্য হয়েছে। ফলে ওই সময় যে পরিমাণ শাস্তি নির্ধারিত হয়েছিলো এখন তা বাড়ানো বাস্তব সম্মত হবে।

এসব আইনের বিদ্যমান শাস্তি: মোটরযান অধ্যাদেশে শাস্তি ছয় মাস কারাদণ্ড দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমান নিয়ন্ত্রণ-১৯৫২ আইনে শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড,  ভবন নির্মাণ আইন ১৯৫২ শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড নেই। চিত্তবিনোদন আইন ১৯৩৩ শাস্তি এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বাল্যবিবাহ রোধ আইন ১৯২৯ শাস্তি এক মাস কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বন আইন ১৯২৭ শাস্তি ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও দুই বছর কারাদণ্ড, সিনেমা আইন ১৯১৮ শাস্তি ৫০ টাকা অর্থদণ্ড ও কারদণ্ড নেই, বিদ্যুত্ আইন ১৯১০ শাস্তি এক বছর দণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, রেলওয়ে আইন ১৮৯০ শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড, জুয়া রোধ আইন-১৮৬৭ শাস্তি এক মাস কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থ দণ্ড, দালাল আইন ১৮৭৯ শাস্তি তিন মাস কারাদণ্ড, পাসপোর্ট আইন ১৯২০ শাস্তি তিন মাস কারাদণ্ড।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জনপ্রশাসনের উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যে ম্যাজিস্ট্রেটকে কতিপয় অপরাধ তাত্ক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে অপরাধ আমলে গ্রহণ করে দণ্ড অরোপের সীমিত ক্ষমতা অর্পণ করার জন্য ২০০৯ সালে মোবাইল কোর্ট আইন প্রণিত হয়। এ আইন অনুযায়ী  নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সংঘটিত বা উদঘাটিত কোনো অপরাধ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আসামির দোষ স্বীকারের ভিত্তিতে উপস্থ্থিত দু’জন সাক্ষী এবং আসামির স্ব্বাক্ষর গ্রহণ করে আসামিকে ঘটনাস্থলে দণ্ড অরোপ করা হয়। খাদ্যে ভেজাল রোধ, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, পরিবেশ রক্ষা, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ইত্যাদি সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে মোবাইলকোর্ট ইতোমধ্যে একটি জনপ্রিয় এবং কার্যকর আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সূত্র জানায়, আইন সংশোধনের পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের সাথে সাত সদস্য বিশিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ ফোর্স যাতে থাকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রধানকে চিঠি দেয়া হবে। এ বিশেষ ফোর্সের নেতৃত্বে থাকবেন পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনে এ ফোর্সের বাইরে আরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিতে পারবেন। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে ই-মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।