মেহেরপুরে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে

মেহেরপুর অফিস: শিশুশ্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও মেহেরপুরের তিনটি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার বিভিন্ন হাট-বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল-রেস্তোঁরা ও কল-কারখানায় শিশুশ্রমিক ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাপক হারে। এছাড়া হরেক রকম জিনিস ফেরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য শিশু। তবে শিশুদের উন্নয়নে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে বলে জানা গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

শিশুশ্রম আইনের কোনো প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন মেহেরপুরে বেড়েই চলছে এর সংখ্যা। কিছু সংখ্যক সুবিধাভোগী মহাজন, দোকান ও কারখানা মালিক কম পারিশ্রমিকে শিশুশ্রমিক নিয়োগ করে তাদের দিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। শিশুদের দিয়ে করাচ্ছে ভারী ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র পরিবারের বেশির ভাগ শিশু এসব কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছে। সরজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন মুদিদোকান, হোটেল রেস্তোঁরা, ওয়েলন্ডিং কারখানাসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নির্বিঘ্নে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। অপরদিকে অভাবের তাড়নায় অনেক শিশু বাদাম, চকলেট, দুধ, খেলনা সামগ্রী বিক্রি করে সংসার চালাতে পিতা-মাতাকে সহযোগিতা করছে।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে ডাস্টবিনের ময়লার স্তুপ থেকে পলিথিন, স্যালাইনের বোতল ও কোমল পানীয়ের ফেলে দেয়া বোতল কুড়াচ্ছে খোকন (১২) নামের শিশু। সে জানালো তাদের সংসারে অভাবের কথা। তাই সে এ পথে নেমেছে। মেহেরপুর শহর, সদর উপজেলার বামনপাড়া, আমঝুপি, বারাদী ও পিরোজপুর বাজার, গাংনী উপজেলার গাংনী বাজার, কাথুলী, কাজিপুর, জোড়পুকুরিয়া ও বামুন্দী বাজার এবং মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ, দারিয়াপুর, মোনাখালী, মহাজনপুর, কোমরপুর বাজারের হোটেল রেস্তোঁরা, চায়ের দোকান ও ওয়েল্ডিং কারখানায় পাঁচশ টাকা থেকে এক হাজার টাকা মাসিক চুক্তিতে কাজ করছে জেলার অনেক শিশু। যে বয়সে স্কুলে পড়াশুনা নিয়ে তাদের ব্যস্ত থাকার কথা সে বয়সে তারা দু মুঠো ভাতের আশায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাগানো যাবে না। যা দণ্ডণীয় অপরাধ। অথচ আইনের তোয়াক্কা না করে শিশু শ্রমিকদের অভাব অনটনের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির হোটেল রেস্তোঁরার মালিক ও কারখানার মালিক এদেরকে কাজে লাগাচ্ছে। প্রশাসনের লোকজন বিষয়টি জানার পরও কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সরকারের সবার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ বাস্তবায়ন হুমকির সম্মুখিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মেহেরপুর জেলার কয়েকটি এনজিও এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান শিশুদের উন্নয়নে কাজ করছে বলে জানা গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করেন জেলার বিজ্ঞ মহল।