মুজিবনগর কৃষি প্রকল্পের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতায় থাই-থ্রি জাতের পেয়ারা বাগান

 

গ্রামী অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার নতুন পথের সন্ধান লাভ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় প্রথম থাই পেয়ারার বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ ও বাগানমালিক এ থেকে বাগান বাম্পার ফলনের আশা করছেন। বাগানমালিক এ বাগান করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন পথের সন্ধান পেয়েছেন। দিন বদলের পালায় এ জাতের বাগান এ জনপদে ছড়িয়ে পড়লে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে অনেক অসচ্ছল পরিবার। চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি।

জানা গেছে, উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের দুধপাতিলা মাঠে ৫ বিঘা জমিতে থাই জাতের পেয়ারবাগান গড়ে তুলেছেন দর্শনার ইসলাম বাজারের মৃত দাউদ আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস। এ জমিতে অধিক ফলনশীল থাই-থ্রি জাতের পেয়ারবাগান করে এলাকায় সাড়া জাগিয়েছেন। এ জাতের পেয়ারাবাগানে এইপ্রথম বাম্পার ফলন দেখে বাগানমালিকের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে।

বাগানমালিক কুদ্দুস বলেন, চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের দর্শনা রেলগেটের খাড়া উত্তরে দর্শনা জংশনের সামনে কেবিন মাঠে ৫ বিঘা   জমিতে এ পেয়ারাবাগানটি গড়ে তুলেছি। ছোট ছোট গাছে পেয়ারাভর্তি ডালগুলো মাটি ছুঁই ছুঁই করে বাতাসে আপন মনে দুলছে। প্রায় বছর খানেক আগে এ মাঠে প্রথম উপজেলা কৃষি অফিসও মুজিবনগর কৃষি প্রকল্পের সার্বিক পরামর্শ এবং সহযোগিতায় থাই-থ্রি চারা নাটোর হার্টিকালচার থেকে ১০ টাকা পিস চারা সংগ্রহ করে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে এ পেয়ারাবাগান লিজ নিয়ে চারা রোপণ করি। বাগানে ৭৪০টি ফলন্ত গাছ রয়েছে।চারা রোপণের এক বছরের মধ্যে কম-বেশি ফলন আসতে শুরু করেছে। প্রথমে অনেক কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেয়ারা নষ্ট হয়ে যায়।প্রতিদিন সকাল-বিকেল নিজে বাগানের পরিচর্চা করে আসছি। ইতোমধ্যে ঢাকার কাওরান বাজারে ৬৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজি দরে ১০ মণ পেয়ারা বিক্রি করেছি। ঢাকার বাজারের মতো স্থানীয় বাজারে এ পেয়ারা যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।বাজারে এখন নানা জাতের ফলমূল থাকার কারণে বাজারদর কিছু কম। এ বাগান করতে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিবছর এ বাগান থেকে ৭ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখি।কৃষি বিভাগের মতে চুয়াডাঙ্গা জনপদের মাটি সকল ফসলের জন্য উপযোগী হওয়ার কারণে এখানে সুস্বাদু এ জাতের পেয়ারাবাগান গড়ে তুললে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে অনেক অসচ্ছল পরিবার।কেবিন নামক মাঠে পেয়ারা বাগান স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ জাতের অধিক ফলনশীল পেয়ারাবাগান করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে অনেক অসচ্ছল পরিবার। মাটির গুণাগুন অনুসারে চুয়াডাঙ্গার ফল দেশের সব মোকামে জনপ্রিয়তা রয়েছে। অন্য ফসলের চেয়ে অধিক ফলনশীল পেয়ারাবাগান অধিক লাভজনক হওয়ায় এ চাষে অনেকে এগিয়ে আসতে পারে। বিপুল সম্ভবনা দেখা দেয়ায় অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক এলাকায় পেয়ারাবাগান করতে এগিয়ে আসতে পারে। এলাকায় দ্রুত একটি ফল গবেষণা সেন্টার গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারি করা দরকার বলে এ জনপদের অভিজ্ঞ ফলচাষি মনে করেন।

চুয়াডাঙ্গার পাইকারি ফলব্যবসায়ী মোমিন বলেন, থাই-থ্রি জাতের পেয়ারা খুব সুস্বাদু।স্থানীয় বাজারে এ জাতের ফল কম-বেশি এই প্রথম দেখা মিলতে শুরু করেছে। বাজারে নানা জাতের পেয়ারা পাওয়া যায়। পেয়ারার চাহিদা সব সময় থাকায় বাজার দর সব সময় ভালো পাওয়া যায়

উপজেলা কৃষিবিদ কৃষি কর্মকর্তা কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, এ জনপদের মাটিতে এক ধরনের শুষ্ক খনিজ উপাদন রয়েছে, যা মিষ্টি ফলের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। বাগানে ফুল আসার আগে ও পরে আগে বাগান কীটনাশক দিয়ে স্প্রে করলে পোকার আক্রমণ থেকে বাগান রক্ষা করা যায়। ফুল ফুটে গেলে পোকা আক্রমণ করে ফুলের রস চুষে খেয়ে ফেলে। বাগানে পেয়ারা গুঁটি মোটর দানার মতো হলে পোকার আক্রমণ থেকে বাগান রক্ষা করতে কীটনাশক দিয়ে স্প্রে করলেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রায় সারা বছরেই ফলন কম-বেশি ফলন পাওয়া যায়। বাগানটি নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা হয় এবং বাগান মালিককে সার্বিক পরামর্শ দেয়া হয়।