মওদুদসহ বিএনপির পাঁচ শীর্ষ নেতা জেলহাজতে

জামিন ও রিমান্ড শুনানি বৃহস্পতিবার : দুটি মামলায় ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন

 

স্টাফ রিপোর্টার: গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় নগরীর মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় বিএনপির পাঁচ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, এমকে আনোয়ার, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। একইসাথে মহানগর হাকিম জয়নব বেগম ৫ নেতার জামিন ও পুলিশের রিমান্ডের আবেদন শুনানির জন্য ১৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন। এ ৫ নেতাকে দু মামলায় ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। আদালতে বিএনপি নেতাদের পাঠানো হলেও কি অভিযোগে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে- পুলিশ তার নথিপত্র পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে।

bnp-5-leader_40615

এর আগে গত শুক্রবার রাতে দু দফায় বিএনপির পাঁচ নেতাকে আটকের পর রাজধানীর মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিকেলে তাদেরকে নেয়া হয় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে। পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত দুটি পুরনো মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই মামলা দুইটির এজাহারে বিএনপি নেতাদের নাম ছিলো না। মূলত আটকের পর পুলিশ ওই মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখায়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদেরকে ১০ দিনের (প্রতিটিতে) আবেদন জানিয়ে গতকাল বিকাল চারটায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন না করায় আদালত আগামী বৃহস্পতিবার রিমান্ড আবেদন শুনানির দিন ধার্য করে। দায়ের করা দুটি মামলায় তাদেরকে পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে দেখানো হয়। কোর্টহাজত থেকে বিকেল ৩টার দিকে বিএনপি নেতাদের আদালত কক্ষে নেয়া হয়। এরপর নেতাদেরকে বসতে দেয়ার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চান আইনজীবীরা। আদালত অনুমতি দিলে বিএনপি নেতারা আইনজীবীদের জন্য রাখা বেঞ্চে বসেন। এরপরই জনাকীর্ণ আদালতে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি নেতাদের পক্ষে প্রবীণ আইনজীবী ও সাবেক এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাবেক এটর্নি জেনারেল এডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া, অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম প্রমুখ আইনজীবী শুনানি করেন। এ সময় শতাধিক আইনজীবী আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

জামিন শুনানিতে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দুজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। বর্তমানে সংসদ চলা অবস্থায় স্পিকারের অনুমতি ছাড়া তাদেরকে আটক করা বেআইনি। বাকি তিন জন মর্যাদাবান লোক। তাই তাদেরকে আদালত জামিন দিতে পারে। অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এ নেতাদের বিরুদ্ধে নেই। হয়রানির উদ্দেশ্যে এইসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাদেরকে জামিন দেয়া হোক।  রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আব্দুল্লাহ আবু ও ঢাকা জেলা জজ আদালতের পিপি খন্দকার আব্দুল মান্নান বলেন, ঘটনার উত্স, কারা পরিকল্পনাকারী এবং পলাতক আসামিদের নাম পরিচয় জানতেই তাদেরকে রিমান্ডে নেয়া দরকার। এ মুহূর্তে জামিন দেয়া হলে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটবে। অতএব, জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হোক।

উভয়পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে বিএনপি নেতাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। একইসাথে আগামী ১৪ নভেম্বর জামিন ও রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য রাখেন। এরআগে গতকাল শনিবার বিকাল তিনটার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান খান শিমুল বিশ্বাসকে কড়া পুলিশ পাহারায় প্রিজনভ্যানে করে মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয় থেকে বিকেল ৩টায় আদালতে নেয়া হয়। এ সময় বিএনপি সমর্থিত শতাধিক আইনজীবী সরকার বিরোধী শ্লোগান দেন এবং নেতাদের মুক্তি দাবি করেন। সকালে আদালত প্রাঙ্গণে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।