ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের নায়ক জেনারেল গিয়াপ আর নেই

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রকে পদানত করতে বাধ্য করা ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ভো গুয়েন গিয়াপ আর নেই। গতকাল শুক্রবার রাজধানী হ্যানয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি।

দেশটির সরকারি কার্যালয় জেনারেল গিয়াপের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করে জানিয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। ১৯৫৪ সালে দিয়েন বিয়েন ফু যুদ্ধক্ষেত্রে ভিয়েতনামিজ বাহিনীর কাছে ফরাসি বাহিনীকে লজ্জাজনকভাবে পরাজয় বরণে বাধ্য করেন এ কিংবদন্তী রণযোদ্ধা। ১৯৬৮ সালে গিয়াপের নেতৃত্বাধীন ভিয়েতনামের মুক্তিবাহিনীর কাছে লজ্জাজনকভাবে পরাজয় বরণে বাধ্য হয় বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী। ১৯১১ সালের ২৫ আগস্ট ভিয়েতনামর মধ্যাঞ্চলীয় কুয়াং বিন প্রদেশে জন্মগ্রহণকারী গিয়াপ ১৪ বছর বয়সেই স্থানীয় একটি গেরিলা বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর ১৯৩৮ সালে ভিয়েতনামের জনক ও বিপ্লবী নেতা হো চি মিন’র ইন্দোচাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং তৎকালীন জাপানি দখলদারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হো’র সাথে চীনে পালিয়ে যান। চীনেই তিনি জাপান দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তোলেন। এরপর দেশে এসে নেমে পড়ে সশস্ত্র আন্দোলনে। ১৯৫৪ সালে ঔপনিবেশিক ফরাসি বাহিনীকে ভিয়েতনাম থেকে হটিয়ে দেয়ার পর ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীকে পদানত করতে বাধ্য করেন গিয়াপ। যুদ্ধ চলাকালে তার নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনী একযোগে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভিয়েতনামিজ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন ৪০টি প্রাদেশিক রাজধানী ও সায়গনে (তৎকালীন দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী) অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস দখল করে নেয়। ফলে লজ্জাজনকভাবে পরাজয় বরণে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র।

দীর্ঘ যুদ্ধের পর সার্বভৌম ভিয়েতনাম সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন গিয়াপ। ১৯৭৬ সালে দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব গ্রহণের ৬ বছর পর রাজনীতি থেকে অবসর নেন তিনি। ঔপনিবেশিক শক্তির শোষণে জর্জরিত ভিয়েতনামিজরা জাপান, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা রাখায় গিয়াপকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।