ভালো বেতনে চাকরির টোপে চুয়াডাঙ্গার নারী ওমানে পাচার : বাড়ি ফিরে রোমহর্ষক বর্ণনা

কয়েক দফা কেনাবেচার পণ্য নারীর অবর্ণনীয় নিপীড়ন ॥ দেশে ফেরত দিতেও নিয়েছে দু লাখ টাকা
স্টাফ রিপোর্টার: ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভনে টাকা দিয়ে বিদেশ গিয়ে কয়েক দফা কেনাবেচার পণ্য হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার নারী বাড়ি ফিরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার পরদিনই তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে তিনি বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা গাড়াবাড়িয়া বাগানপাড়ার আসমা খাতুনই রিপন, জালাল ও দেলোয়ারের মাধ্যমে ওমানে পাচার করে। সেখানে যাওয়ার পর একটি ব্যারাকে তিনদিন একরকম বন্ধ থাকার পর বিক্রি করে দেয়। ওমানের এক নাগরিক তার বাড়িতে নিয়ে যে নির্যাতন করেছে তার বর্ণনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই। আমার মতো কোনো নারী যেন ওইভাবে পাচারচক্রের কবলে না পড়ে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের গাড়াবাড়িয়া বাগানপাড়ারই মেয়ে আকলিমা খাতুন। আনুমানিক ১৫ বছর আগে বিয়ে হয় হাতিকাটায়। দীর্ঘদিনের দাম্পত্যে তাদের সংসারে আসে এক মেয়ে। মেয়ের বয়স এখন ১২ পেরিয়ে। ৯ মাস আগে আকলিমা পড়ে তার প্রতিবেশী আজির বকসের মেয়ে আসমার খপ্পরে। আসমা বলে দেড় লাখ টাকা দিলে ওমানে যাওয়া যাবে। সেখানে ২৮ হাজার টাকা মাসে বেতন মিলবে। এ টোপে পড়ে আকলিমা তার খালুর কাছ থেকে ১ লাখ ও ধারকর্জ করে বাকি টাকা তুলে দেয় আসমা খাতুনের হাতে। আসমার সহযোগী নারায়ণগঞ্জের রিপন, কুমিল্লার জালাল ও সিলেটের দেলোয়ারের হতে তুলে দেয়। তখন বুঝিনি ওই আসমা ওদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। ওরা বিক্রি করে দেয় ওমানের পার্টির কাছে। তারা বিমানবন্দর থেকে নিয়ে তাদের ব্যারাকে রাখে। সেখানে তিনদিন রাখার পর বিক্রি করে দেয় এক ব্যক্তির নিকট। সেখানে গৃহপরিচারিকার কাজ করার পাশাপাশি গৃহকর্তার নিপীড়নে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই ব্যক্তি ফেরত দিয়ে যায় ব্যারাকে। এরপর সেখানে ফেলে রাখে। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। দেশে ফিরতে চাইলে তারা বলে, তোমাকে ওরা বিক্রি করে দিয়েছে। বাংলাদেশি ৫ লাখ টাকা দিলে তোমাকে ফেরত দেয়া হবে। অন্যথায় বিক্রি করা হবে অন্যদের কাছে।
আকলিমা বলেছেন, এই কথা শোনার পর সেখানে থেকে বাড়িতে যোগাযোগ করি। শেষ পর্যন্ত দু লাখ টাকা ওই আসমার হাতেই ঢাকার আদাবরে বসে দিতে হয় আমার বাড়ির লোকজনকে। দু মাস আগে ওই দু লাখ টাকা দিলেও আমাকে ফেরত দেয় গত ৪ মে। বিমানে আমার পাশের সিটে থাকা বাংলাদেশি পুরুষের সহযোগিতায় আমি বাড়ি ফিরি। আমি এতোটাই অসুস্থ যে, আমার চলাফেরার মতো শক্তি নেই। ভেতরে সব ঘা হয়ে গেছে। অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে আমার। আমি ওই প্রতারকদের পাল্লায় পড়ে শুধু টাকাই নষ্ট করিনি, আমাকে হারাতে হয়েছে সবকিছু। ওদের বিচার করতে হবে। আমি চাই, আমার মতো আর একজন নারীও যেন ওমানে গিয়ে ওইভাবে কেনাবেচার পণ্য না হয়।