বেকারত্ব নিরসনে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে সকলেই স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাবে

দামুড়হুদার ফুটপাতের ইঞ্জিনিয়ারের কদর নেই

 

তাছির আহমেদ: লেখাপড়া না জেনেও এরা ফুটপাতের ইঞ্জিনিয়ার। ওস্তাদের হাত ধরে বছর দশেক পেছনে চলে তার কাছে পাওয়া শিক্ষাজ্ঞান অর্জন করে, বেকার সমস্যা দূরীকরণ করতে বিভিন্ন হাট-বাজার ও পথপ্রান্তরে তালাচাবি মেরামতের কাজ করে চলেছেন চুয়াডাঙ্গার আকন্দবাড়িয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আব্দুর রাজ্জাক। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা দর্শনার নিকটবর্তী আকন্দবাড়িয়া গ্রামের মৃত বদরুদ্দিনের ছেলে এই আব্দুর রাজ্জাক। ক্লাস থ্রি পাসের সামান্য অক্ষর জ্ঞান ছাড়া নেই তার কোনো একাডেমিক সনদ। বিভিন্ন হাট-বাজারে ও পথেঘাটের লোকজন তাকে চেনে ফুটপাতের ইঞ্জিনিয়ার বলে আবার কেউ ডাকে তালাচাবির মিস্ত্রি বলে। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে যাই বলে ডাকুক আর চিনুক তাতে আমার কোনো দুঃখ নেই। পথেঘাটে তালাচাবি মেরামত করে কোনো রকম জীবন-জীবিকা চলে গেলেই আমি খুশি।

ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরের রহমান ওস্তাদের সাথে প্রায় ১০ বছর বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে তালাচাবি মেরামতের কাজ পুরোপুরি রপ্ত করি। এরপর নিজ এলাকায় ফিরে আসি। প্রায় ৪০ বছর ধরে হাট-বাজারে তালাচাবি মেরামতের এ কাজ করে কোনো প্রকার সংসার চালিয়ে আসছি। এখন শিয়ালমারী, দামুড়হুদা, ডুগডুগি ও আকন্দবাড়িয়ার হাটের ফুট পথে বসি। হাটের ফুটপাথের ধারে বসার কারণে নিত্যদিন হাটে যাতায়াতকারীরা আমাকে চিনে ফেলেছে। তারা জেনে গেছে আমি ফুটপাতের ইঞ্জিনিয়ার। তবে এখন আর এ কাজে তেমন কদর নেই। তাই এ কাজের পাশাপাশি টিনের ঘরের ছাউনি দেয়ার কাজও করি। ঘরছাউনির কাজ পেলে সেদিন আর তালাচাবি মেরামতের কাজ করতে হাট-বাজারে আসি না। তালা আছে চাবি নেই, আবার তালা চাবি আছে নষ্ট হয়ে কাজ হচ্ছে না। এমন সব তালা নিয়ে লোকজন হাটে আসে আমার কাছে চাবি বানাতে। এমনকি পুলিশ হ্যান্ডকাপের চাবি তৈরির কাজও করে থাকি। এ সকল তালা ভুক্তভোগি মানুষদের নিয়ে আনা তালার নমুনা দেখে চাবি তৈরি করে দিই। এভাবে সারাদিনের যা আয় হয় এবং নিজের ঘটিবাটি গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরি।

তিনি আরও বলেন, কারিগরি শিক্ষা পাল্টে দিতে পারে বেকারত্বের অভিশাপ। আমাদের দেশে বেকার সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। অগনিত মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে থাকার কারণে আর্থিক সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। যুগের প্রেক্ষাপটে ব্যবসা বাণিজ্যে আত্ম নিয়োগ না করে চাকরির সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছে বহু শিক্ষিত যুবক। বেকারত্ব নিরসনে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে সকলেই স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাবে। এজন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।