বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর দাবির সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশও

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভারতে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর ফারাক্কা বাঁধ সরানোর দাবির সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশও। এই বাঁধের ভয়াবহতা সম্পর্কে এতদিন বাংলাদেশ বলে আসলেও এবার সঙ্গে পেয়েছে বিহারকে। বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধে দুই দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এবার ভারতের ভেতর থেকে বাঁধ সরানোর দাবি ওঠায় সুযোগটি কাজে লাগাতে চাচ্ছে সরকার। বিভিন্ন ফোরামে এটি তুলে ধরা হবে। এ জন্য করণীয় ঠিক করতে কর্মকর্তারা জরুরি বৈঠক করেছেন। বুধবার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ফারাক্কা বাঁধ সরিয়ে নিতে বাংলাদেশও উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এ বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কবলে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, এর শিকার ভারতের ভেতরকার কয়েকটি রাজ্যও। দীর্ঘদিন পর বাঁধের ভয়াবহতার ব্যাপারে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী মুখ খুলেছেন। সেটিকে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের ভেতরে বুধবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যৌথ নদী কমিশনের বিশেষজ্ঞদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের মতামত (পয়েন্ট অব ভিউ) জানতে চাওয়া হয়েছে। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত সরকারকে বাংলাদেশের অবস্থান জানানো হবে। এ প্রসঙ্গে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বীরপ্রতীক তার কার্যালয়ে বুধবার বলেন, ভারতে ফারাক্কার ডাউনে গঙ্গা নদীর প্রায় ৮৩ কিলোমিটার এক পাড়। ফলে বাংলাদেশের নদীগুলো পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না। কাজেই ওখানেও তো লবণাক্ততা ওপরের দিকে আসছে। ওদের সুন্দরবনেও ইকোলজিক্যাল ডিজাস্টার হচ্ছে। বিহার তো আছেই, পশ্চিমবঙ্গেও হচ্ছে। বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার গঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধকে পুরোপরি সরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির কাছে। কারণ বন্যায় বিহার রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে পলি পড়ে গঙ্গা নদী ভরাট হয়ে গেছে। ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা বাঁধের আগে এই পলি সরাসরি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ত। বিহারের জনগণ ভালো করেই জানেন ’৭৫-এর আগে তাদের অবস্থা কী রকম ছিল, এখন কী অবস্থা। এটা ফারাক্কার কারণে হয়েছে তা নিজেরাই এখন উপলব্ধি করছে।
যদিও এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের ভিন্ন বাস্তবতার কথা তুলে ধরা হচ্ছে। তাদের দুই রাজ্যের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে। এক রাজ্য বেশি সুবিধা পাচ্ছে, আরেক রাজ্য পাচ্ছে না। আর পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও বাংলাদেশের চেয়ে সুবিধাজনক নয়। গঙ্গাতে পানি কমে যাওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের গড়াইল, মাথাভাঙ্গা, আড়িয়াল খাঁ, মধুমতি নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকছে না। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ততা চলে আসছে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৮৩ কিলোমিটার। সেই ক্ষতিটা ভারতেরও। সেখানকার ওই অঞ্চলের নদীগুলোর অবস্থাও বাংলাদেশের মতো। ওখানে তারা পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না। সেখানেও কৃষি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভারতের অংশের সুন্দরবনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার পরও যদি পশ্চিমবঙ্গ ফারাক্কা বাঁধের পক্ষে বলে, সেটা তাদের ব্যাপার। ভারতের একজন রাজনীতিবিদের কাছ থেকে ফারাক্কার বাঁধ তুলে নেয়ার দাবির বিষয়টি কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। সরকার এটি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবছে কি করে সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার গঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধকে পুরোপুরি সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেন। বিহারের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বলেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গায় বিপুল পরিমাণ পলি জমছে। আর এ কারণে প্রতিবছর বিহারে বন্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, এর একটা স্থায়ী সমাধান হলো ফারাক্কা বাঁধটাই তুলে দেয়া। ভারতের ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের আপত্তি দীর্ঘদিনের। এই প্রথম ভারতের একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক ও মুখ্যমন্ত্রী ফারাক্কা বাঁধ তুলে দেয়ার কথা বললেন। ভারতের ভেতর থেকে ওঠা এ দাবি বাংলাদেশের কাছে ছিল অভাবনীয়। এটি ফোরামে তুলে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।