বিলুপ্তি ঠেকানোর কৃত্রিম উপায়ে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ

স্টাফ রিপোর্টার: বাগেরহাটের ঐতিহাসিক হযরত খানজাহানের (রহ.) মাজারের দীঘির মিঠাপানির কুমিরের বিলুপ্তি ঠেকানোর সকল প্রচেষ্টা অবশেষে ভেস্তে গেছে। কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফোটানোর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ইনকিউটেবর থেকে ৮০ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিরের ডিমগুলো অবশেষে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

খানজাহানের মাজারের দীঘির দক্ষিণপাড়ে একটি কুমির মার্চ মাসের প্রথম দিকে ৫৫টি ডিম পাড়ে। এ খবর পেয়ে ৭ এপ্রিল বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের নির্দেশে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের একটি বিশেষজ্ঞ দল সেখানে গিয়ে ১২ ডিম সংগ্রহ করে তা দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফুটাতে ইনকিউবেটরে বসানো হয়। তখন থেকে কুমির বিশেষজ্ঞরা সার্বক্ষণিক চোখ রাখেন ইনকিউবেটরের ওই ডিমের দিকে। কুমিরের ওই ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটনোর জন্য অপেক্ষায় থাকেন প্রাণি বিশেষজ্ঞরা। জেলা প্রশাসনের বাসভবনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ইনকিউটেবরে রাখা ওই ডিম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না ফোটায় আরও কয়েকদিন  নজরদারিতে রাখা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডিম না ফোটায় তারা ডিমগুলো সরিয়ে নিয়েছে। বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুখেন্দ্র শেখর গায়েন বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খানজাহান (র.) দীঘির কুমিরের ডিম না ফোটায় ইনকিউটেবর থেকে ৮০ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার ডিমগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আমাদের ধারনা দীঘির পুরুষ কুমিরটি প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে মহিলা কুমিরটির ওই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো সম্ভব হয়নি।

ইতিহাস অনুযায়ী, হযরত খানজাহান (র.) সুলতানী শাসন আমলে খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের প্রথমদিকে বাগেরহাটে খলিফতাবাদ নগর রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় তিনি ঠাকুর দীঘি নামে পরিচিত এ দীঘিটি সংস্কার করেন। তিনি এ দীঘিতে কালা পাহাড় ও ধলা পাহাড় নামে মিঠা পানির প্রজাতির এক জোড়া কুমির পোষেণ। তিনি তাদের নিয়মিত খাবার দিতেন, কুমির দুটি তার হাত থেকে খাবার খেতো। তার মৃত্যুর পরও মাজারের খাদেম ও ভক্তরা এ কুমির দুটিকে নিয়মিত খাবার দিতেন। ক্রমে এ কুমির যুগল বংশবিস্তার করে এবং গত সাতশ বছর ধরে বংশানুক্রমে তারা এই দীঘির উন্মুক্ত পরিবেশে বসবাস করে আসছিলো। এক সময়ে এ কুমির হযরত খান জাহানের ভক্ত অনুরাগীদের বিশ্বাস ও অনুভূতির প্রতিকে পরিণত হয়। এরা হয়ে ওঠে এ মাজার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মাজারের এ কুমির নিয়ে এলাকার মানুষের মুখে অনেক কিংবদন্তী ও লোককাহিনি শোনা যায়।

খানজাহানের শাসনামলে তার হাতে ছাড়া সর্বশেষ বংশধর কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় বেঁচে থাকতে মিঠা পানির কুমিরের বিলুপ্তি ঠেকাতে ২০০৫ সালে ভারতের মাদরাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে ছয়টি কুমির এনে এই মাজারের দীঘিতে ছাড়া হয়। মাদরাজ থেকে এনে ছাড়া ওই কুমিরের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মারামারিতে কালাপাহাড় গুরুতর আহত হয়। এর কিছুদিন পর কালাপাহাড় মারা যায়। এরপর খানজাহানের হাতে ছাড়া অবশিষ্ট থাকে ধলাপাহাড়। সেটিও চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি মারা যায়। ২০০৫ সালের ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে এনে ছাড়া মিঠা পানির কুমির গত কয়েক বছর ধরে ডিম দিলেও তাতে নতুন করে কোন বাচ্চা ফুটছে না।

ফলে এ দীঘিতে মিঠা পানির কুমির রক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। তাই এখন মিঠা পানির কুমিরের ডিম সংগ্রহ করে তা দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফুটানোর উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। অবশেষে তা ভেস্তে গেল।