বাবার কাছে দীক্ষা নেয়া রাম প্রসাদ নিজেও শেখাচ্ছেন কিশোর ছেলেকে

 

দু যুগে ময়নাতদন্তের সংখ্যা আড়াই হাজার পার

মাহমুদ কামরান: কিশোর ছেলেকে লাশ কাটা শেখাচ্ছেন বাবা। বাবাও শিখেছিলেন তার বাবার কাছে। তার বাবাও শিখেছিলেন দাদার কাছে। এভাবেই চলে আসছে মতি চাঁদের ৪ পুরুষ। লাশ কাটা-সেলাইয়ের পেশা কেমন লাগে? চুয়াডাঙ্গা মর্গে কোনো সমস্যা আছে কি-না? অতো মরা আনা হয়, কাটা হয় তাদের প্রেতাত্মা ঘোরে না? এরকম অনেক প্রশ্নের সোজা সাপটা জবাব দিয়েছেন রাম প্রসাদ ডোম। তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে দীর্ঘদিন ধরে ময়নাতদন্তের জন্য কাটা-সেলাইয়ের পেশায় রয়েছেন। তিনিই মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কীভাবে কাটতে হয়, গন্ধ এড়াতেই বা কী কী করতে হয় এসব শেখাচ্ছেন তার ১৬ বছর বয়সী ছেলে অনন্ত কুমারকে।

প্রেতাত্মা বলে কিছু আছে নাকি। কোনোদিন তো ওরকম কিছু মনে হলো না। থাকলে নিশ্চয় একদিন না একদিন বুঝতে পারতাম। ওসব গল্পে থাকে, বাস্তবে তার অস্তিত্ব কোথায়? আর পেশার কথা বলছেন? এ পেশায় যাকে তাকে কি আর মানায়? বংশ পরম্পরায় আমরা এ পেশা ধরে রেখেছি। কাউকে না কাউকে তো এ কাজ করতেই হতো! বাবা মতিলাল ডোম শিখেছিলেন ঠাকুরদাদা মতি চাঁদ ডোমের নিকট। কুষ্টিয় মর্গে কাজ করতেন তিনি। সেখানে কাজ শেখার পর মতিলাল ডোম চুয়াডাঙ্গায় কাজ শুরু করেন। চুয়াডাঙ্গায় প্রথমে মর্গ ছিলো পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের অদূরে। সেখানে এখন পুলিশ পার্ক হয়েছে। ওখান থেকে তুলে নেয়া হয় কেদারগঞ্জ বাজারের নিচে নদীর ধারে। ওখান থেকে ময়নাতদন্তের ঘর উচ্ছেদের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে স্থানীয়রা। এর প্রেক্ষিতে ১৯৯৩ সালের দিকে তিন বছর চুয়াডাঙ্গায় ময়নাতদন্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকে। মেহেরপুর বা ঝিনাইদহে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ নিতে হতো। পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কম্পাউন্ডের দক্ষিণপ্রান্তে টিবি হাসপাতালের নিকট টিন দিয়ে মর্গ নির্মাণ করা হয়। সেখানেই দীর্ঘদিন ধরে ময়নাতদন্তের কাজ চালানো হতো। ওইখানেই নির্মাণ করা হয়েছে মর্গ ভবন। আবাক হলেও সত্য যে, অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও অভ্যন্তরে না আছে বৈদ্যুতিক পাখা, না আছে শীতাতপ কক্ষ।

বৈদ্যুতিক পাখা ছাড়াই ভ্যাপসা গরমে সেনিতে হাতুড়ি মারতে হয় রাম প্রসাদ ডোমকে। তিনি বৈদ্যুতিক পাখা লাগানোর ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু কৃপা কামনা করে বলেছেন, আমরা দু ভাই এই কাজ করি। একভাই ঝিনাইদহে দায়িত্ব পালন করে। দু ছেলে এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ছেলে অনন্তকে কাজ শেখানোর জন্য মাঝে মাঝেই সাথে করে আনি। মরা কাটি। কতোটি ময়না তদন্ত করেছেন? এ প্রশ্নের জবাবে রাম প্রসাদ বললেন, বাবা অবসর গ্রহণের পর এ দায়িত্ব নিয়ে এ পর্যন্ত দু হাজার ৫শ ৭৭টি ময়নাতদন্ত করেছি। একদিনে ১০টিও ময়নাতদন্ত হয়েছে। তবে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্বের তুলনায় ভালো হওয়ার কারণে বর্তমানে ময়নাতদন্তের সংখ্যা কমে গেছে।