বাংলাদেশে গত ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও ক্রসফায়ারে ৯০ জন নিহত

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে গত ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও ক্রসফায়ারে ৯০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতায় ৩৭ জন এবং গণপিটুনিতে ২২ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এতে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের বরাতে বলা হয়, গত ছয় মাসে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাথে ক্রসফায়ারে ১৩ জন, পুলিশের সাথে ক্রসফায়ারে ৪৬ জন, গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ৮ জন, র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ১ জন, র‌্যাব ও পুলিশের গুলিতে একজন ও বান্দরবানের লামায় সেনাবাহিনীর গুলিতে একজন মারা গেছেন। এছাড়া পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হয়ে ১ জন, পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর ১ জনের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগের বরাতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গত ছয় মাসে আটক ৪৪ জন আটক হলেও এখনও ৩২ জনের খোঁজ নেই। তবে আটকের পর দুইজনের লাশ পাওয়া গেছে এবং ৭ জন পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। তবে নিখোঁজদের আটকের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো অস্বীকার করেছে বলে আসক জানায়। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ছয় মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ১৮৫টি। এসব ঘটনায় নিহত হন ৩৭ জন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৫৭০ জন। এ সময়ে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ২৫ জন। এর মধ্যে কয়েদি ৮ জন ও হাজতি ১৭ জন রয়েছেন। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে আসক জানায়, গত ছয় মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৮০ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৬ নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৫জন। ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে আরও ৩৯ জন নারীর ওপর। এদিকে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৫৮ জন নারী। যৌন হয়রানির কারণে ৩ জন আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে একজন নারী ও চারজন পুরুষ নিহত হয়েছেন। হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৯৫ জন নারী-পুরুষ। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২০১ নারী। এর মধ্যে ১৪৪ নারীকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ২৩ নারী। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৪৩ নারী। তাদের মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৮ নারী।

ছয় মাসে ক্রসফায়ারহেফাজতে নিহত ৯০: আসক যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৬৮ নারীকে। একই কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৬ নারী। স্বামীর ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে ১১ নারীকে। এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১৮ নারী। সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪ নারী। একই সময়ে ২২ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে আসক। তাদের মধ্যে নির্যাতনে মারা গেছেন ৪ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে একজনকে। ৭ জনের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। দেশে শিশু নির্যাতন ও হত্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় মানবাধিকার বিষয়ক এই সংগঠনটি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, গত ছয় মাসে দেশে ৬২৯ শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ১৩২ শিশুকে হত্যা করা হয়। ৩৭ শিশু আত্মহত্যা করেছে। নিখোঁজের পর উদ্ধার করা হয়েছে ১৮ শিশুকে। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৪৪ শিশুর। রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ১৫ শিশুর। সীমান্তে গত ছয় মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ৭ জন ও নির্যাতনে ৪ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। অপহরণের শিকার হয়েছেন ২৫ জন। অপহরণের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মধ্যস্থতায় ফিরে এসেছেন ৪ জন বাংলাদেশি।