ফাল্গুনেই কালবোশেখির হানা : রাজধানীতে নিহত ২

স্টাফ রিপোর্টার: ফাল্গুন এখনও শেষ হয়নি। বোশেখ আসতে মাসখানেক বাকি। এরই মধ্যে রোববার রাজধানী চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবোশেখির ঝড় বয়ে গেলো। বিভিন্ন স্থানে ঝড়ের সাথে ছিলো শিলাবৃষ্টিও। ঝড়ে ঢাকার রামপুরা ও কেরানিগঞ্জে দু শিশু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কেরারিগঞ্জে আহত হয়েছে অন্তত আটজন। নিহতরা হলো- কারিশমা (৪) ও রিয়ামনি (৯)।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক বলেন, রোববার রাত ৮টার দিকে কারিশমাকে হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পাবনায় গাছ পড়ে আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। সারাদিনের ভাপসা গরমের পর বিকেল থেকেই ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করে। সন্ধ্যায় শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যায়। ঝড়ের পরপরই শুরু হয় বৃষ্টি।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, রাত ৮টা পর্যন্ত রাজধানীতে ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ অল্প বৃষ্টিতে তেজগাঁওসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বৃষ্টির কারণে কাজ শেষে ঘরে ফেরা মানুষ বিপাকে পড়েন। ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে অল্প কিছুক্ষণ পরেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মো. শাহ আলম জানান, ফাল্গুনে কালবোশেখি ও শিলাবৃষ্টি অস্বাভাবিক নয়। মরসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। তবে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা নেই।

আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে,সোমবার ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। স্বজনদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সন্ধ্যায় ঝড়ের সময় রামপুরার মোল্লা টাউয়ারের পাশের একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন থেকে দেয়ালের একটি অংশ পাশের টিনশেড ঘরে পড়লে কারিশমা গুরুতর আহত হয়। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর; বাবার নাম শামীম হাওলাদার।

তবে দমকল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা ব্রজেন কুমার সরকার বলেন, ঝড়ে রামপুরায় এ ধরনের দুর্ঘটনার খবর আমাদের কাছে আসেনি। শুধু ধানমণ্ডিতে বিদ্যুতের তার রাস্তায় পড়ার খবর পেয়েছি।

কেরাণীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে ঝড়ের সময় তিনতলা ঘরের টিন উপড়ে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে; আহত হয় অন্তত আটজন। রোববার সন্ধ্যায় ঈমামবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার ওসি মুনিরুল ইসলাম জানান। নিহত রিয়ামনি ওই এলাকার বাসিন্দা। আহতদের স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ায় তিন তলাবিশিষ্ট মাসুদ কলোনির উপরের টিনের ছাউনি উপড়ে যায়। সেসময় ওই টিনের আঘাতে মারা যায় রিয়ামনি।

বিকেলে পাবনা সদরসহ জেলার ৯ উপজেলায় কালবৈশাখী বয়ে যায়। বিভিল্পু স্থানে গাছ উপড়ে পড়ে। এতে হুড়োহুড়ির কারণে কমপক্ষে ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া শহরের আবদুল হামিদ রোডে একটি বিলবোর্ড বিদ্যুতের তারের ওপর পড়লে শহরের বিদ্যুত সরবরাহ বল্পব্দ হয়ে যায়। পাবনার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বিকেল ৫টা থেকে পরবর্তী এক ঘণ্টা সদর, সাঁথিয়া, বেড়া, সুজানগর, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যায়।

পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুন্সী মনিরুজ্জামান সমকাল জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ এখনও পাওয়া যায়নি। রাজশাহীতে বিকেল ৩টার দিকে ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি। এতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মনিটরিং অফিসার আহসান হাবীব খাঁ জানান, ফাল্গুনে বৃষ্টি আমের মুকুলের জন্য ভালো। তবে শিলাবৃষ্টিতে আমের গুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।