প্রহসনের নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় বাধার প্রতিবাদ : চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির মিছিলে পুলিশি বাধা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের প্রথম দিনে চাঁদপুরে বিজিবির গুলিতে যুবদল কর্মী নিহত

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে রাজপথ-রেলপথ-নৌপথে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল বুধবার চাঁদপুর জেলা সদরে বিজিবির সাথে সংঘর্ষে এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। বিজিবি গাড়ি নিয়ে চাঁদপুর থেকে হাজীগঞ্জে যাওয়ার পথে মহামায়া এলাকায় অবরোধকারীরা হামলা চালায়। বিজিবি প্রথমে তাদের ধাওয়া করে ও পরে গুলি চালায়। এতে যুবদলকর্মী ফারুক পাটোয়ারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এছাড়া সারাদেশে এ কর্মসূচি পুরোপুরি ঢিমেতালে কেটেছে। দু-তিনটি জেলায় বিক্ষিপ্ত চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা ঘটেছে। চুয়াডাঙ্গা বিএনপির মিছিল পুলিশি বাধার মুখে পড়লেও উল্লেখযোগ্য অপ্রীতিকর ঘট্না ঘটেনি। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের অদূরবর্তী বেলগাছি রেলগেটের নিকট রেললাইনের ওপর টায়ারে আগুন জ্বালালেও স্থানীয়রাই তা দ্রুত নিভিয়ে দেয়। গতকাল সন্ধ্যায় ছাত্রদলের কয়েক নেতা আগুন দেন। ট্রেন চলাচল করলেও যাত্রী সংখ্যা যেমন কম, তেমনই সময়সূচিও ভেঙে পড়েছে।

আগামী ৫ জানুয়ারির ভোট। নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বলে দাবি তুলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট তা বাতিল এবং ‘গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে সারাদেশে অনিদিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ জেলার অভ্যন্তরীন রুটে যানবাহন চলাচল করলেও দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। পণ্যবাহী ট্রাকও দূরের গন্তব্যে ছেড়ে যায়নি। যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় দেশজুড়ে আগের মতোই অচলাবস্থা বিরাজ করে।

এদিকে, বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার অঘোষিত গৃহবন্দিদশা গতকাল এক সপ্তা পূর্ণ হয়েছে। তবে বুধবার তার বাড়ির সামনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিলো কিছুটা শিথিল। এরপরও গ্রেফতার আতঙ্কে দলের শীর্ষ নেতাদের কেউই দিনভর তার সাথে দেখা করতে সেদিকে পা বাড়াননি। খালেদা জিয়াও বাসা থেকে বের হওয়ার কোনো চেষ্টা করেননি।

প্রসঙ্গত, ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচন প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে ২৯ ডিসেম্বর ‘ঢাকামুখি অভিযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই বলতে গেলে তিনি অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, সোমবার মধ্যরাত থেকে দূরপাল্লার যানবাহন পুরোদমে চলাচল শুরু করলেও বুধবার ভোরের আগেই তা বন্ধ হয়ে যায়। বিলাসবহুল পরিবহনগুলো তাদের গাড়ি গাবতলী টার্মিনাল থেকেও সরিয়ে নেয়। নাশকতার আতঙ্কে দূরপাল্লার কোনো ট্রাক পণ্য পরিবহন করেনি। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে ও কাছাকাছি দূরত্বে বেশকিছু যাত্রীবাহী বাস-ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে।

জেলা বিএনপি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ও পৌর ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি সকাল ১১টার দিকে কোর্ট মোড় থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কোর্ট মোড়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সভাপতিত্ব করেন পৌর ১৮ দলীয় জোটের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম মনি। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি সদর উপজেলা ১৮ দলীয় জোটের আহ্বায়ক অ্যাড. এমএম শাহাজাহান মুকুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল হালিম হিরু, যুগ্মসম্পাদক মাহামুদুল হক পল্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক রউফুন নাহার রীনা, দফতর সম্পাদক আবু আলা সামছুজ্জামান, জেলা জামায়াত ইসলামীর শুরা সদস্য অ্যাড. আসাদুজ্জামান, পৌর জামায়াত ইসলামীর আমির মফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাজি আব্দুল মান্নান, যুগ্মআহ্বায়ক একরামুল হক, জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক শাহাজাহান খান, সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মহাবুল হক, জেলা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, জেলা ওলামাদলের আহ্বায়ক মাও. আনোয়ার হোসেন, পৌর বিএনপির প্রচার সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনু, দফতর সম্পাদক ইয়াছিন হাসান কাকন, আলুকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইবাদত হোসেন, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী, পদ্মবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রায়হান কাজল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্মআহ্বায়ক মিনহাজ উদ্দিন, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, জেলা ছাত্রদলের নেতা সাইফুল ইসলাম সুমন, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাসুদুল হক মাসুদ, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্মআহ্বায়ক হাফিজুর রহমান মুক্ত, পৌর যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক তানভির আহাম্মেদ, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি ইমরান মহলদার রিন্টু, সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি আশিকুল হক শিপুল, সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মিলন মেম্বার, আলমডাঙ্গা উপজেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, উজ্জ্বল খান প্রমুখ।

এদিকে আওয়ামী লীগের নীল নকশার পাতানো প্রহসনের তফশিল বাতিল, দেশব্যাপি গণগ্রেফতার, মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে বাধা প্রদানের প্রতিবাদে ও আগামী ৫ জানুয়ারি বর্ণিত তফশিল বাতিল ও লাগাতার অবরোধের সমর্থনে ও সকল প্রকার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ গত বুধবার বিকেল ৩টার দিকে কোর্টমোড়স্থ জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে জেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আইনুল হক পচা। প্রধান অতিথি ছিলেন  জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি জেলা জাতীয়বাদী সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক বকুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আরশেদ আলী কালু, জেলা মৎসজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম ওহিদ, জেলা কৃষক দলের সভপতি হামিদুল হক নেতাজী, মশিউর রহমান বাবু, সিরাজুল ইসলাম, আফতাব উদ্দীন পিন্টু, শহীদ হোসেন, রাইহান উদ্দীন, শহিদুল ইসলাম বাবলু, শামীম আল প্রিন্স, আশরাফুল আলম, শাহেদ আলী, বাবুল মিয়া, শামীম, শাহিন সাহা, আব্দুল কাদের রবি প্রমুখ। পরিচালনায় ছিলেন পৌর বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ। প্রেসবিজ্ঞপ্তি

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, ১৮ দলের ডাকা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে দর্শনায় পিকেটিং করেছে বিএনপি ও যুবদল নেতা-কর্মীরা। গতকাল বুধবার সকালে জেলা জিয়া মঞ্চের আহ্বায়ক নাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা দর্শনার বেশ কয়েকটি সড়কে অবরোধ ও পিকেটিং করে বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা আশরাফুল ইসলাম, সেলিম, আজিজুল, যুবদল নেতা আবু সাঈদ, পিয়ার, সানোয়ার, জাকির, মোতালেব, শহিদুল, মোমিন, আমিনুল, ছাত্রদলনেতা হাসান, হাসু, সজিব প্রমুখ।