প্রধানমন্ত্রিত্ব নয় আমি শান্তি চাই : শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলের ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে গভীর ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, শান্তি চান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জনগণের দুর্ভোগ সহ্য করতে পারি না। আমি জনগণের শান্তি ও উন্নয়ন চাই, প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়।’

‘বিএনপি ও জামায়াত ক্যাডাররা এখন হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যখন আমি দেখি যে, তারা (বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা) মানুষ পুড়িয়ে মারছে, বিশ্বাস করুন, তখন আমি খুব কষ্ট পাই।’ শেখ হাসিনা গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে খতিব ও শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের জাতীয় সম্মেলনে ভাষণকালে এ কথা বলেন। ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে একই মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল স্বাগত বক্তৃতা দেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল, জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমাম মাওলানা মো. নিজামউদ্দিন নোমানী ও জাতীয় খতিব সম্মেলনের আহ্বায়ক মাওলানা জালালউদ্দিন কাদেরী এতে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা পেট্রোল ঢেলে ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করছে। এ ধরনের নৃশংসতা সহ্য করা যায় না। সামপ্রতিক হরতালের সময় বিএনপি-জামায়াতের নির্মমতায় নিহত ১৫ বছরের শিশু মনির হোসেনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের ক্যাডাররা মানুষকে অগ্নিদগ্ধ হতে দেখে হাসিতে ফেটে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মানুষের কল্যাণে এ বিচার সম্পন্ন হতে হবে কারণ, যুদ্ধাপরাধীরা গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং মা-বোনদের সম্ভ্রমহানির মতো অপরাধ করেছে। বাংলার মাটিতে তাদের বিচার হতেই হবে।

‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই’ উল্লেখ করে যারা তাদের অপতত্পরতার মাধ্যমে ইসলামকে জঙ্গিবাদী ধর্মে পরিণত করে ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে চায় ও মানুষের ওপর নির্মমতা চালায় তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য তিনি আলেম, ওলেমা, খতিব ও ইমামদের প্রতি আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, আলেম-ওলেমাদের মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে যুবসমাজ ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আলীয়া ও কওমী এ দু ধারার প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষা পরিচালিত হচ্ছে। আলীয়া ধারার শিক্ষা কার্যক্রমে সরকারি স্বীকৃতি থাকায় এ মাদরাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু কওমি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সনদে সরকারি স্বীকৃতি না থাকায় তারা সরকারি চাকরি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ জন্য বর্তমান সরকার কওমি শিক্ষাকে সরকারি সনদের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। কেউ কেউ একে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছেন। কিন্তু সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে কওমি মাদরাসায় শিক্ষিতরাও যাতে বিদেশসহ সরকারি-বেসরকারি খাতে চাকরি পায়। তবে এটা বাধ্যতামূলক করা হবে না এবং কাউকে তা গ্রহণে বাধ্যও করা হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামের প্রচার-প্রসারে আলেম-ওলামাগণের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারা ওয়ারেসাতুল আম্বিয়া হিসেবে যুগযুগ ধরে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সমাজে কোনো অসঙ্গতি দেখলে তারা মানুষকে হেদায়েতের পথে আহ্বান করতেন। কিন্তু আজ যেন এই দাওয়াতের পথ অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে গেছে। এখন তাদের অনেকেই দাওয়াতের পথ থেকে সরে এসে দেশের মুসলমানদের আস্তিক ও নাস্তিকে বিভাজনের খেলায় মেতে উঠেছেন। তার সরকার মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে ১ হাজার মাদরাসায় একাডেমিক ভবন তৈরি এবং ৮০টি মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আগামীতে পুনরায় সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত মসজিদ নির্মাণ করব ইনশাআল্লাহ।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী জাতীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমাম এবং শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।