পৌনে এক কিলোমিটার রাস্তার জন্য ১৪ কিলোমিটার পাড়ি!

 

হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের সিঙ্গা গ্রামের পশ্চিম প্রান্তের মাত্র পৌনে এক কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশার কারণে জরুরি প্রয়োজনে নাগরিকদের ১৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরে আসতে হয়। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কাপসাটিয়া ও ফলসী ইউনিয়ন এবং হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার ত্রিমুখি সংযোগস্থল হিসেবে এলাকার যোগাযোগের জন্য অত্যান্ত গুরত্বপূর্ণ সড়ক ভালকী বাজার থেকে হরিণাকুণ্ডু জিসি ভায়া সিঙ্গা সড়ক। সড়কটির দৈর্ঘ্য মাত্র ৭ কিলোমিটার। ৭ কিলো মিটার সড়কের মধ্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার পৌরসভাধীন, দু কিলোমিটার ফলসী ইউনিয়নাধীন এবং অবশিষ্ট আড়াই কিলোমিটার কাপাসাহাটিয়া ইউনিয়ন এলাকাভুক্ত। সংশ্লিষ্ট ২টি ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের হাজার হাজার নারী পুরুষ প্রতিনিয়ত এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। এ সড়কটির পার্শ্ববর্তী অংশে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও বাজার-ঘাট নেই। নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির জন্য উপজেলা সদরই একমাত্র ভরসা। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে রাস্তাটি পাকা করণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু দেড় যুগে সোয়া ৬ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করণের কাজ সমাপ্ত হলেও অবশিষ্ট পৌনে এক কিলোমিটার সড়ক পাকা করণের অভাবে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ বর্ষা মরসুমসহ বছরের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সময় কাঁদাপানিতে একাকার হয়ে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হয়। গ্রামটির দেড় শতাধিক ব্যক্তি প্রবাসে চাকরি-ব্যবসা বাণিজ্য করে প্রতি মাসে কোটি টাকার রেমিট্যান্স উপার্জন করে দেশের সমৃদ্ধি সাধনে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। অথচ ডিজিটাল সভ্যতার দেশে রাস্তায় হাটু কাঁদার কারণে চাকরিজীবি, ব্যবসায়ী, স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীগণ জুতা-সেন্ডেল বহন করে জামাকাপড় হাটুর ওপর গুটিয়ে অমানবিক অবস্থায় এঁটেল মাটির জটিল কর্দমাক্ত রাস্তাটুকু পার হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে গমন করতে বাধ্য হয়। কোনো মুমূর্ষু রোগীকে জরুরি চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন হলে তাকে লাশ টানা খাটিয়ায় করে মৃত মানুষের ন্যায় কাঁধে বহন করে হাসপাতালে নিতে হয়। এভাবে বহনকৃত মুমূর্ষু কয়েকজন রোগী হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই বিনা চিকিৎসায় পথিমধ্য্যেই মারা গেছে বলে এলাকাবাসী জানায়।

সড়কটির কাঁচা অংশে মাঝেমধ্যেই ছিনতাই, ডাকাতিসহ জনজীবন বিপন্নকারী কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে। গত এক সপ্তার ব্যবধানে সংশ্লিষ্ট এলাকাটিতে একাধিক ছিনতাইয়ের ফলে নাগরিকগণ চরম উদ্বিগ্ন। সন্ধার আগেই নিজ কাজ সমাধান করে দিনের আলোতে বেহাল সড়কটি অতিক্রম করছে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যদিয়ে। ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল মুন্নাফ বলেন, প্রায় দু যুগ ধরে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পাকাকরণের জন্য এলাকাবাসী জনপ্রতিনিধিদের নিকট জোর দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু ভোটের মরসুম এলে এলাকার ভোটারদের ভোট প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য রাস্তাটি ভোটের পর পরই পাকা করনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে থাকেন। কিন্তু পাশ করার পর ওই সকল জনপ্রতিনিধিগণ তাদের প্রতিশ্রুতি ভুলে যান। পাঁচ বছর পর পর সরকারের ক্ষমতার পালা বদল হলেও বদল হয়নি সিঙ্গাবাসীর ভাগ্যের। যে যায় লঙ্কাই, সেই হয় রাবন, প্রবাদের অবসান ঘটিয়ে পৌর এলাকার মাত্র পৌনে এক কিলোমিটার সড়ক পাকা করণের মাধ্যমে এলাকার সুষম উন্নয়নের প্রতি জনপ্রতিনিধিগণ নজর দেবেন বলে এলাকার সচেতন নাগরিকদের প্রত্যাশা।