পিরোজপুরে কাউখালীতে যুবলীগ নেতা নৃশংসভাবে খুন

স্টাফ রিপোর্টার: পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্মআহ্বায়ক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী হিসেবে রাজনৈতিক বিবেচনায় খুনের দায় থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত এনামুল হক ইনু (৪৫) গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বেকুটিয়ায় নিজ বাড়ির কাছে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। তিনি মোটরসাইকেলযোগে বেকুটিয়া ফেরিঘাটে যাওয়ার পথে আততায়ীরা তাকে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের পর এনামুল পিরোজপুর থেকে তার কলেজপড়ুয়া মেয়ে হামিদা হক পিংকিকে নিয়ে নিজের মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরেন। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে একই মোটরসাইকেলে চড়ে ফেরিঘাটের উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হন। বিকেল চারটার কিছু আগে তাকে গাজীরহুলা-বেকুটিয়া নতুন হাট সংযোগ সড়কে খুনিরা মোটরসাইকেল আটকিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে।

তার মুখমণ্ডল, ঘাড় ও পেটে বেশ কয়েকটি কোপের চিহ্ন রয়েছে। একে একে কুপিয়ে মুখমণ্ডল বিকৃত করে দেয়া হয়েছে যাতে তার চেহারা চেনা না যায়। ঘাড়ের কোপটি এমন যে তা কোনোভাবে দেহের সাথে অবিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ সময় তার মোটরসাইকেলটি কয়েক গজ দূরে পড়ে ছিলো। বেকুটিয়া ফেরিঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গ্রামীণ সড়কে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

এ খুনের খবর পেয়ে কাউখালী থেকে ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ, বরিশাল ৱ্যাবের একটি টিম ও পিরোজপুর সদর সার্কেলের এএসপি এনএম মোরশেদ ঘটনাস্থলে যান। রাতে বরিশাল থেকে ফেরার পথে পিরোজপুরের পুলিশ সুপার এসএম আকতারুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়া পিরোজপুর, কাউখালী, ভাণ্ডারিয়া, রাজাপুরসহ আশপাশের শ শ মানুষ গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দল বেঁধে এনামুলের লাশ দেখতে ভিড় জমান।

নিহতের পিতা আব্দুল হামিদ হাওলাদার প্রাথমিকভাবে প্রতিবেশী কিছু ব্যক্তির জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এনামুলের বড় মেয়ে পিংকি পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী ও ছোট মেয়ে বেকুটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও শিশু কন্যাসহ আত্মীয়স্বজন শোকে মুহ্যমান।

এনামুল চারদলীয় সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কাউখালী-চিড়াপাড়া টেম্পোস্ট্যান্ডে ২০০৪ সালে সংঘটিত রোকামিয়া খুনের মামলায় তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক বিবেচনায় তার সাজা মওকুফ করে হত্যার দায় থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে কাউখালী থানায় বিভিন্ন সময় গুরুতর অপরাধের বেশ কিছু মামলা ছিলো।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তার একটি অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত দল রয়েছে। যারা মাদক ব্যবসা, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত। প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় কয়েক বছর ধরে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। অতিসম্প্রতি একটি সশস্ত্র গ্রুপ নিয়ে পিরোজপুর সদর থানার কুমিরমারা আবাসনে হানা দিলে ৱ্যাব ও পুলিশ তাকে ধরতে গেলে এনামুল কৌশলে সদলবলে পালিয়ে যান। এছাড়া অতীতে ৱ্যাব তাকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়।