পাক-ভারত সীমান্তে যুদ্ধের দামামা : আকাশে এফ-১৬ : নিয়ন্ত্রণ রেখায় প্রস্তুত সেনাও

010205-F-1631A-001 An U.S. F-16 flies towards Rimini, Italy to join with the Italian Air Force in a training mission. U.S. Air Forces from the 510th Fighter Squadron, Aviano Air Base, Italy and Italian Air Forces from the 83rd Combat Search and Rescue Squadron, Rimini, Italy, participated in a 4-day training mission from Feb. 5 to Feb. 8, 2001. The mission involved U.S. F-16 aircrews locating and authenticating survivors and coordinate pickup with Italian rescue crews. F-16's were also tasked with escorting helicopters to protect them from air and ground threats. This is the first ever tasking of a full-time combat search and rescue mission for F-16's from the 510th Fighter Squadron. (U.S. Air Force photo by Tech. Sgt. Dave Ahlschwede)

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ভারতে হামলার লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করেছে পাকিস্তান। তবে ভারত যদি পাকিস্তানে আক্রমণ করে বসে তাহলেই এই পাল্টা জবাব দেবে তারা। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ভারতে হামলার লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের খবর দিয়েছে পাকিস্তানি দৈনিক দ্য ইন্টারন্যাশনাল নিউজ। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে যুদ্ধের জিগির পাকিস্তানে ইসলামাবাদের আকাশে উড়তে শুরু করেছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। তেমনই দাবি করেছেন প্রখ্যাত পাক সাংবাদিক হামিদ মির। টুইটারে মির জানান, ইসলামাবাদের আকাশে উড়তে শুরু করেছে পাক বিমানবাহিনীর এফ-১৬। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতীয় বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করতে শুরু করেছে বলে বৃহস্পতিবারই দাবি করে পাক সংবাদমাধ্যম। সেই রাতেই ইসলামাবাদের আকাশে এফ-১৬ উড়তে শুরু করাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, পাকিস্তানে সার্জিক্যাল আক্রমণ করলে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের কোথায় হামলা করা হবে, তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। তবে গোপনীয়তার স্বার্থে হামলার স্থান উল্লেখ করেনি সংবাদমাধ্যমটি। পাকিস্তানের একটি প্রতিরক্ষা সূত্রের ভাষ্য, ভারতের কোনো ধরনের আগ্রাসন তারা মেনে নেবে না। সীমান্তে যেকোনো হুমকি মোকাবেলার জন্য সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে পাকিস্তান। ভারতের যেকোনো সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য তারা পুরোপুরি প্রস্তুত। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, ভারতের হামলার আশঙ্কার মধ্যেই পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে সামরিক মহড়া দিচ্ছে দেশটির বিমানবাহিনী। ফলে উত্তরাঞ্চলে বেসামরিক বিমান চলাচল স্থগিত রেখে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এদিকে কাশ্মীরের উরিতে ১৮ সেনা নিহতের ঘটনায় প্রতিশোধ নিতে ভারত আক্রমণ চালাতে পারে বলে এমন ধারণা করছে বিভিন্ন মহল। তবে পাকিস্তান মনে করছে, কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় ভারত সরাসরি আক্রমণ না করে স্নায়ুযুদ্ধের ডকট্রিন অনুযায়ী প্রক্সি হামলা চালাতে পারে।
হামিদ মিরের যে টুইট নিয়ে এত হইচই, তাতে তিনি লেখেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২০ মিনিট থেকে ইসলামাবাদের আকাশে এফ-১৬ উড়তে শুরু করেছে। যুদ্ধের আতঙ্কে ইসলামাবাদের কোনো কোনো এলাকায় সাধারণ মানুষকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন বলেও শোনা যায়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই নানা মহলে চাঞ্চল্য ছড়ায়। কারণ ভারত-পাক টানটান উত্তেজনার মাঝে রাতে পাকিস্তানের রাজধানীর আকাশে যুদ্ধবিমান উড়তে শুরু করলে তা যে অশনি সঙ্কেতই বয়ে আনে, তা নিয়ে কারও সংশয় নেই। আতঙ্ক যাতে না ছড়ায়, তার জন্য ওই পাক সাংবাদিক পরে অবশ্য নিজেই সচেষ্ট হন। তিনি রাত ১২টা নাগাদ ফের টুইট করে জানান, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দেশকে রক্ষা করতে পাক বাহিনী যে সব সময় প্রস্তুত, সে কথাই বুঝিয়ে দিচ্ছে বিমানবাহিনী।

যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবেলায় অবশ্য প্রস্তুত ভারতীয় বাহিনীও। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবার বেশ কিছু অগ্রবর্তী চৌকিতে আর্টিলারি সরঞ্জাম মোতায়েন করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবারই খবর পাওয়া গেছে। মজুদ করা হয়েছে জ্বালানি তেলও। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একের পর এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। তার মধ্যে একাধিক বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী তাদের প্রস্তুতি সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রেজেন্টেশন প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেছে বলেও জানা গেছে। পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ অবশ্য নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতের প্রস্তুতিকে খুব বড় করে দেখাচ্ছে। বিবিসি উর্দু এবং জিও নিউজ বৃহস্পতিবার দাবি করেছে, ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিপুল সামরিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সেখানে বফর্স কামান, রকেট এবং ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে বলেও পাক মিডিয়ার দাবি। তাদের আরও দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই এই সামরিক প্রস্তুতি দেখভাল করছেন। তবে এই খবর তারা কোনো সূত্র থেকে পেয়েছে, পাক মিডিয়া তা জানাতে পারেনি। পাক প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল মধ্যরাতে ওয়ার রুম বৈঠক করেছে বলেও একটি অংশ দাবি করে। দু’তরফেই বিপুল প্রস্তুতির মাঝে পাকিস্তানের আকাশে এফ-১৬ উড়তে শুরু করা এবং পাক সরকারের ওয়ার রুম বৈঠকের খবর যদি সত্যি হয়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।

ভারতের গণমাধ্যমেও বেশ গুরুত্বের সাথে এই সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। দেশটির একটি সংবাদমাধ্যম জানায়, ভারতের নিয়ন্ত্রণ রেখায় বিপুল আর্টিলারি সরঞ্জাম মোতায়েন হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবারই খবর পাওয়া গেছে। ৭৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিভিন্ন অগ্রবর্তী চৌকিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভারী গোলাবর্ষণের সরঞ্জাম। শুধু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নয়, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমেও ভারতের এই সামরিক তৎপরতার খবর প্রকাশ করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে জিও নিউজে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার দিনের অধিকাংশ সময়টাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিলিটারি অপারেশনস রুমে কাটিয়েছেন।

কাশ্মিরে উরি সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলা এবং ১৮ জন নিরস্ত্র জওয়ানের মৃত্যুর পর থেকেই হাওয়ায় খবর, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ লাগতে চলেছে? সামরিক সক্ষমতার হিসেবে ভারত পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে। কিন্তু পাকিস্তানের হাতেও আছে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র! ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সদর দপ্তর, প্রশাসনিক ভাষায় সাউথ ব্লক। সেখানে গোপন এবং সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক আলোচনার জন্য যে মন্ত্রণাকক্ষ রয়েছে, চলতি কথায় তার নাম ওয়র রুম বা যুদ্ধ কক্ষ। এই ঘরে কোনো আলোচনা হওয়া মানেই, ভারত সরকার কোনো সামরিক পদক্ষেপের কথা চিন্তা-ভাবনা করছে। গত মঙ্গলবার রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল প্রায় দেড় ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন সেই ঘরে দেশের স্থল, নৌ এবং বায়ু সেনার প্রধানদের সাথে। সূত্রের খবর, পাকিস্তানের মানচিত্র খুলে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা চলে। প্রধানমন্ত্রী তিন সেনাপ্রধানের কাছে জানতে চান, উরি সেনাঘাঁটিতে পাক জঙ্গি হামলার উচিত জবাব দিতে ভারত এই মুহূর্তে কী কী সামরিক ব্যবস্থা নিতে পারে। কী হতে পারে সত্যিই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে? সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার আগে দু দেশের সামরিক ক্ষমতার একটা তুলনা করা যাক। পাকিস্তানের হাতে পাঁচ ধরনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আছে। সবকটিই পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম। সব থেকে স্বল্প পাল্লার হলো নাসের, যা ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে লক্ষবস্তুতে গিয়ে আঘাত করতে পারে। আর সর্বোচ্চ পাল্লার পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র শাহিন-৩, যার আঘাতের ক্ষমতা ২ হাজার ৭৫০ কি.মি পর্যন্ত। অন্যদিকে ভারতেরও আছে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম পাঁচ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র। সব থেকে কম পাল্লার হলো পৃথ্বী, ১৫০ থেকে ৩৫০ কি.মি, এবং সবথেকে দূর পাল্লার অগ্নি-৫ হাজার ৫০০০ কি.মি। অর্থাৎ ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রের মারণক্ষমতা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধের সময় সব থেকে কার্যকরী ভূমিকা নেবে স্বল্পপাল্লার নাসের, বিশেষত সীমান্ত এলাকায়। অনেক সময় একটা হাতির থেকে এক ঝাঁক মশার বিক্রম বেশি হয়। ঠিক সেই রকম। পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যাও ভারতের থেকে বেশি। ভারতের আছে ৯০ থেকে ১১০টি পরমাণু অস্ত্র। সেখানে পাকিস্তানের ১০০ থেকে ১২০টি। এর বাইরে, ভারতের সামরিক ক্ষমতা প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানের থেকে অনেকটা বেশি। মোট সৈন্য সংখ্যায়, ট্যাংক, কামান, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমানের সংখ্যায় ভারতই এগিয়ে। বিশেষ করে নৌবাহিনীর ক্ষমতায় পাকিস্তানের থেকে বেশি যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ তো বটেই, ভারতের আছে সুবিশাল বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, যা নৌ যুদ্ধে এবং সামগ্রিকভাবে ভারতকে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে এবং ভয়টা সেখানেই, বলছেন সমর কৌশল বিশেষজ্ঞরা। পাকিস্তান যখন ক্ষমতায় পারবে না, যুদ্ধে কোণঠাসা হয়ে পড়বে, তখন হাত চলে যেতে পারে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের বোতামে৷