পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা এ বছর থেকেই বাতিল

 

স্টাফ রিপোর্টার: এ বছর থেকেই বাতিল হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা। একই সাথে এ বছর থেকে অষ্টম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, এবার থেকেই পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা আর হবে না। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের অষ্টম শ্রেণিতে একটি সমাপনী পরীক্ষা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই তো কথা বলি। তিনি বলেন, এবার থেকেই পঞ্চম শ্রেণিতে আর সমাপনী পরীক্ষা হবে না এ বিষয়ে আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, পদ্ধতিগতভাবে শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। তিনি বলেন, আগে প্রাথমিক সমাপনীর পরীক্ষা হত পঞ্চম  শ্রেণিতে, তখন প্রাথমিকের শিক্ষাকাল ছিলো প্রথম থেকে পঞ্চম  শ্রেণি। এখন আমাদের এ শিক্ষাকাল প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।

অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার নাম ও অন্যান্য বিষয়গুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিসভায় একটি প্রস্তাব যাবে জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগামী সপ্তাহে বা ১৫ দিনের মধ্যেই প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের যদি বৃত্তি রাখতে হয় তবে বৃত্তি বাছাই পর্ব একটা থাকবে। আমরা যে ৮২ হাজার বৃত্তি দিচ্ছি সে প্রশ্নও তো আবার আছে। নিয়ম অনুযায়ী এ পরীক্ষা না থাকলে বৃত্তিও থাকার কথা নয়। যদি বৃত্তি রাখতে হয় তাহলে মেধা যাচাইয়ের অন্য কোনো একটা ব্যবস্থা রাখতে হবে। থানাভিত্তিক বা এ রকম একটা কিছু। এবার থেকেই ৫ম শ্রেণিতে সমাপনী তুলে দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, অভিভাবকদের দাবির যৌক্তিকতা আমলে নিয়ে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা খুশি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। পরীক্ষা ও কোচিংয়ের চাপ থেকে মুক্ত হচ্ছে। আমাদের জন্য এটাই আনন্দের বিষয়।

প্রাথমিক সমাপনী নিয়ে স্কুলগুলোতে চলছে কোচিং বাণিজ্য। রমজানে স্কুল বন্ধ থাকলেও ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার কারণে কোচিংয়ে বাধ্য করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। কোনো কোনো স্কুলে চলছে মডেল টেস্টও। সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর স্কুলগুলোতে কোচিং ক্লাস চলবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে রাজধানীর শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে কোচিং করিয়ে তো আর লাভ নেই। কোচিং ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হবে। ২০০৯ সাল থেকে কোমলমতি শিশুদের জন্য পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এই পরীক্ষা চালুর পর থেকেই অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তারা এ পরীক্ষাকে শিশুদের জন্য ‘মানসিক চাপ’ হিসাবে দেখছেন। পরীক্ষার বাড়তি চাপ নিয়েই শিশুরা বড় হয়ে উঠছে। ১৮ মে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সভায় প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়। পরে ৩১ মে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০১৭ সাল থেকে ৫ম শ্রেণিতে আর সমাপনী হবে না। শুধুমাত্র অষ্টম শ্রেণি শেষে একটি সমাপনী পরীক্ষা হবে। মন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই আন্দোলনে নামেন অভিভাবকরা। তাদের দাবি ছিলো, এবার থেকেই ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করতে হবে। অভিভাবকদের দাবির প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয় বলে আসছিলো, মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় এবার থেকেই ৫ম শ্রেণিতে সমাপনী বাতিলের পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণিতে সমাপনী আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়। শেষে প্রধানমন্ত্রীর সায় নিয়ে এবার থেকেই ৫ম শ্রেণির সমাপনী বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয় গতকাল।