না বুঝেই কোটার পর ধুয়ে হারাচ্ছি খাবারের পুষ্টিমান

চুয়াডাঙ্গায় পুষ্টিহীনতায় ভুগছে শতকরা ৭২ জন মানুষ
খাইরুজ্জামান সেতু: মাছ চোর বুয়া মাছকে সুতি কাপড়ের সাথে তুলনা করে যতো ধোয়া যায় তোতাই খাটো হয় বলে কিছু মাছ আড়াল করলেও কোটার পর বেশি বেশি ধুলে খাটো না হলেও পুষ্টিগুণ কিন্তু ঠিকই কমে। সে কারণে গবেষকদের অভিমত, শাক-সবজিসহ অনেক কিছুই রয়েছে যা কোটার আগে ভালো করে ধুয়ে কোটার পর পরিমিত ধুতে হবে। আর এই কোটা ধোয়ার হেরফেরেই হারাচ্ছি আমরা খাবারের পুষ্টিগুণ। তা না হলে পেটপুরে খেয়েও কেন চুয়াডাঙ্গার শতকরা ৭২ জন পুষ্টিহীনতায় ভুগছি? পুষ্টিবিদদের চমকে দেয়ার মতো এ তথ্য চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বশীল অনেকেরই হতবাক করেছে।
জানা গেছে, জেলাতে পুষ্টিহীনতায় ভুগার মূল কারণ সচেতনতার অভাব, কিভাবে খাবার প্রক্রিয়া করলে পুষ্টি থাকবে এটা অনেকেই আমরা যেমন জানি না, তেমনি কিসে পুুষ্টি বেশি আছে সেগুলো আমরা অনেকেই জানি না। পুষ্টিবিদদের মতে শরীর ভালো রাখতে হলে পুষ্টির ভূমিকা রয়েছে অপরাসীম, পুষ্টিহীন মানুষ বেশি রোগে আক্রান্ত হয়। পুষ্টিহীনতায় ভুগলে মানুষ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাই।
চুয়াডাঙ্গায় প্রায়ই মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এর অধিকংশই শিশু। আর এর মূল কারণ সচেতনার অভাব বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে সরকারের পাশপাশি কাজ করছে ইউনিসেফ।
সিভিল সার্জন অফিসসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় পুষ্টিহীনতায় ভুগছে শতকার ৭২ জন। এর মধ্যে বয়সের তুলনায় ওজন কম মানুষ ভুগছে শতকরা ২৯ জন, বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম শতকরা ৩২ জন, উচ্চতার তুলনায় ওজন কম শতকরা ১১ জন। এরমধ্যে অধিকংশই ০ থেকে ৫ বছরের শিশু, পাশাপাশি এছ দুগ্ধদানকারী মা। জেলার চার উপজেলালাতে তুলনা মূলকভাবে চুয়াডাঙ্গা সদর ও জীবননগর উপজেলাতে পুষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা কম। কিন্তু দামুড়হুদা ও আলমডাঙ্গাতে পুষ্টিহীনতা মানুষের সংখ্যা বেশি। সবচেয়ে পুষ্টিহীন মানুষ বেশি দামুড়হুদা উপজেলাতে। পুষ্টিবিদরা আরো জানান পুষ্টিহীনতা রোধ করতে খাবার তালিকায় প্রতি বেলাতে ভাত জাতীয় খাবার রাখতে হবে, মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, দুধ যেকোনো একাট খাবার রাখতে হবে। টক ফলের সাথে অন্য যেকোনো একটি ফল রাখতে হবে। প্রতিবেলাতে শাক-সবজি রাখতে হবে। তবে সবুজ শাক-সবজি হলে ভলো হয়। বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হলে গর্ভবতী মা যেনো কোনোভাবেই পুষ্টিহীনতায় না ভোগে।
পুষ্টিবিদরা জানান, শাক-সবজি বড় টুকরো করে কাটতে হবে। কেটে রাখা শাক-সবজি বেশিক্ষণ ফেলে রাখা যাবে না। সবজি কাটার আগে অবশ্যই ধুয়ে নিতে হবে। কাটার পর ধুলে ভিটামিন নষ্ট হয়। যে সবজিগুলো খোসাসহ খাওয়া যায় সেগুলো কাটার সময় খোসা রাখতে হবে। ভাতের মাড় কখনও ফেলে দেয়া যাবে না। এতে ভাতের সব পুষ্টিই মাড়ের সঙ্গে চলে যায়। মাড় হাঁড়িতেই শুকিয়ে ফেলতে হবে। বেশি সময় নিয়ে চাল ধোয়াও অনুচিত। শাকসবজি বাজার থেকে নিয়ে এসে ফেলে রাখা যাবে না। যেগুলো রান্না করতে হবে সেগুলো দ্রুত সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
শাক বাজার থেকে নিয়ে এসে ভালো মতো বেছে ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর পানি ঝরিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। রান্নার সময় ঢাকনি দিয়ে পাত্র ঢেকে রাখতে হবে। শাক-সবজি বেশি আঁচে অনেকক্ষণ রান্না করলে ভিটামিন ও খাদ্যগুণ কমে যায়। সিদ্ধ করা সবজি ও কাঁচা ফলমূল সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর। সম্ভব হলে এগুলো খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
রান্নায় তেল-মসলা কম ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। কারণ অতিরিক্ত তেল-মসলা খাবারকে সুস্বাদু করলেও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। শাক রান্নার সময় খুব বেশি সময় নিয়ে ভাজবেন না। অল্প আঁচে রান্না করে একটু পানি থাকতেই নামিয়ে ফেলুন। পুষ্টিমান বজায় থাকবে।
মাছ ও মাংস রান্না করার সময় লক্ষ্য রাখবেন, যেন অতিরিক্ত সিদ্ধ না হয়ে যায়। আবার কম সিদ্ধ হওয়া মাছ-মাংস খাওয়াও অনুচিত। রান্নার সময় খাবার বেশি নাড়াচাড়া করা উচিত নয়। খাবার সোডা, স্বাদ লবণ ইত্যাদি খাবারে ব্যবহার না করাই ভালো। এগুলো খাদ্যের পুষ্টি নষ্ট করে দেয়।
বেশিদিন ফ্রিজে রাখা খাবারের পুষ্টিমান নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেশি পরিমাণ খাবার একবারে রান্না না করাই ভালো। কাঁচা শাক-সবজি ফ্রিজে রাখার সময় পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। আলাদা করে সংরক্ষণ করতে পারলে আরও ভালো হয়। মাছ ফ্রিজে রাখার সময় না ধুয়ে কেবল মুছে রাখার চেষ্টা করুন। বেশিদিন টাটকা থাকবে। রেফ্রিজারেটর সবসময় পরিষ্কার রাখা জরুরি।
পুষ্টিকর খাবার মানেই যে মাছ-মাংস তা নয়। ডাল কিংবা সবজি দিয়েও পূরণ করতে পারেন দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম জানান, জেলাতে পুষ্টিহীন মানুষ কমাতে সরকারের পাশপাশি ইউনিসেফ লজিস্টিক সাপোর্টসহ বিভিন্ন ওষুধপত্র দিয়ে সহায়তা করছে। এরা বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন দফতরের পুষ্টিহীনত ব্যক্তিদের জন্য কর্নার রাখা হয়েছে। এছাড়াও সচেতন করার জন্য সভা, সেমিনার, নামাজের খুদবার সময় প্রচার, মহিলা সমাবেশ, মাঠ দিবস ইত্যাদি।