নারী পাচার রোধে দারিদ্র্য বিমোচনের গুরুত্ব অনেক

নারী ও শিশু পাচার রোধে নানামুখি উদ্যোগ নেয়া হলেও তা থেমে নেই। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, দরিদ্র পরিবারের অসহায় নারীরাই পাচারকারীদের প্রলোভনে পড়ে। পাচার হয়। পাচার হওয়ার পর শুধু পতিতালয়ে বিক্রিই হয় না, বন্দি হয়ে কৃতদাসী জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। দেশ থেকে অসংখ্য নারী পাচার হয়েছে, হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন শহর থেকে তাদের কেউ কেউ উদ্ধারও হচ্ছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ভারতের মুম্বাই শহরের একটি পতিতালয় থেকে খদ্দেরের সহযোগিতায় দু নারী উদ্ধার হয়েছে। এরা বাংলাদেশি। মোটা অঙ্কের বেতনে ভালো চাকরির প্রলোভনেই পাচার হয় ওরা।

 

অভাবের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারের যুবতীর সামনে কোনো নারী পাচারকারী যখন কৌশলে ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন দেখায়, তখন সবকিছু ভুলে পাচারকারীকেই সে দেবতা ভাবতে শুরু করে। পাচার হওয়ার পর যখন পাচাকারীদের হাত বদলের মধ্যে পড়ে, অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয় তখন তার আর ফেরার পথ থাকে না। ভাগ্যবদল হয় ঠিকই, নেমে আসে অনিশ্চয়তার ঘোর অন্ধকার। দাঁতে দাঁত চেপে নির্যাতন সহ্য করে কিছু টাকা রোজগার করলেও তা পিতা-মাতার কাছে পাঠানোর পথ থাকে না। চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার জয়রামপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে যারা পাচার হয়েছে তাদের অধিকাংশেরই হদিস নেই। তারা সকলেই দরিদ্র পরিবারের অসহায় নারী। তাদের কয়েকজন ফিরলেও তারা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন হারিয়েছে। পাচারকারীদের কেউ কেউ শনাক্ত হলেও তাদের সিংহভাগই আইনের আওতার বাইরে। যারা বিচারপ্রার্থী তারা দরিদ্র, সরকারি খরচে বিচার নিশ্চিত করার মতো সচেতন যেমন তারা নয়, তেমনই দীর্ঘসূত্রতায় ধৈর্যচ্যূতি ঘটে। পার পেয়ে যায় বেশিরভাগ পাচারকারী। কিছু পাচারকারীর যে শাস্তি হচ্ছে না তাও নয়, তুলনায় কম বললেও ভুল হয় না। দেশে নারী ও শিশু পাচার রোধে কঠোর আইন প্রচলিত থাকলেও যথাযথ প্রয়োগের অভাব যে পরিলক্ষিত হয় না তাও নয়। বেসরকারি কিছু উন্নয়নমূলক সংস্থা নারী ও শিশু পাচার রোধে নানামুখি কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করলেও দারিদ্র্য কেড়ে নিচ্ছে সফলতা।

 

নারী পাচারকারীদের অপতৎপরতা বন্ধে অবশ্যই যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ প্রয়োজন। পাশাপাশি দরকার সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচন। অভাব যখন সচেতনকেও অন্ধ করে, তখন অভাব ঘোচাতে না পারলে আইন প্রয়োগ এবং সচেতনমূলক কর্মসূচি অসহায়। অভাব ঘোচাতে নারী শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বনির্ভর হওয়ার মতো কর্মসংস্থান প্রয়োজন। একেবারেই যে কর্মংস্থান নেই তাও নয়, দেশে অধিকাংশ কর্মসংস্থানই বড়শহর কেন্দ্রীক। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমংস্থান গড়ে তুলতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগী হওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদেরও আন্তরিক করতে এলাকার দায়িত্বশীলদের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।