নতুন জোটের ঘোষণা শিগগিরই : এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শিগিরই নতুন রাজনৈতিক জোট আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় পার্টির বনানীর কার্যালয়ে এক সভা থেকে তিনি সাংবদিকদের এ কথা জানান। পরদিকে এইচ এম এরশাদের নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এ জোট গঠন এরশাদ ও শেখ হাসিনার একটি পাতানো খেলা। বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচনের মাধ্যমে এরশাদের এ জোটকে আগামী সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে নাজমুল হুদা মনে করেন। আগের রাতে বিকল্প ধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের(জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের সাথে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা। ওই বৈঠকের কথা তুলে ধরে ক্ষমতাসীন মহাজোটের অন্যতম শরিক নেতা এরশাদ বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছি। অচিরেই নতুন জোটের ঘোষণা আসবে। মহাজোট ছাড়ছেন কি না- সে ঘোষণাও দুয়েকদিনের মধ্যে দেবেন বলে এরশাদ জানান। একই অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বুধবার সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর বাসায় বৈঠকে এ চার দলের নেতৃত্বে তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। আমরা শিগগিরই এ জোটের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেব। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের বাইরে সম্ভাব্য নতুন এ জোটে ড. কামাল হোসেনের গণফোরামও থাকবে বলে রুহুল হাওলাদার জানান।

আঁতুড়ঘরেই আটকে গেলো হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন প্রস্তাবিত চারদলীয় জোট। অনেক কৌশলে তিনি এ জোট গঠন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পর্দার অন্তরালের দৌড়ঝাঁপ অন্যদের মধ্যে সংশয় তৈরি করে। এ কারণে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার লুকায়িত স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ও জাসদের সভাপতি আসম আবদুর রবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এরশাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়। তাই তাদের পক্ষে এ জোটে যাওয়া সম্ভব নয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাসদের পক্ষ থেকে এরশাদকে বলা হয়েছে, আপনি মুখে যাই বলুন না কেন হঠাৎ করে রঙ বদলে ফেলবেন- এমনটাই জানাজানি হয়ে গেছে। জাসদের একজন কেন্দ্রীয় নেতা এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে এরশাদ দর কষাকষি করে নিজে একা দালাল না হয়ে আমাদেরকে নিয়ে নৌকা মিছিলে যোগ দিতে চাইছেন। এরশাদ খোলাসা করেননি। তবে তার অসংলগ্ন কথাবার্তায় অন্যদেরকেও সংশয়ের মধ্যে ফেলেছে। আসম আবদুর রব বলেছেন, এরশাদের সাথে জোট গড়া নিয়ে কোনো কথাই হয়নি।

 তিনি আশা প্রকাশ করেন, জামায়াতে ইসলামীবিরোধী ইসলামী দলগুলোও এই জোটে যোগ দেবে। ‘তৃতীয় জোট’ আসছে বলে জানালেও জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের এই অনুষ্ঠানে এরশাদ আবারো বলেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে না। “সব দল নির্বাচনে না আসলে সে নির্বাচন হবে মূল্যহীন। জনগণের কাছে তা কোনো গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তাই সব দল না আসলে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। সাবেক এই সামরিক শাসকের ভাষায়, দেশের জন্য দুই নেত্রীর কোনো ‘মমতা’ নেই। “এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। দুই দলই অভিশাপ। এই দুই রাহুর হাত থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে হবে।”বর্তমানে সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলে থাকা বিএনপির নেতৃত্বে গণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই ঊনিশশ নব্বইয়ের দশকে এরশাদের নয় বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছিল। তিনি বলেন, “এ দল ও দল হবে না। এবার হবে ‘আমরা’ দল। দুই দলের অশুভ চক্রকে ভাঙতে হবে। সুযোগ এসেছে, সে সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে।” এরশাদের সঙ্গে সম্ভাব্য জোটে যারা থাকছেন, তাদের মধ্যে বিকল্প ধারার বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপি আমলে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে ছিলেন। তবে ২০০২ সালে দলের চাপে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। আর কাদের সিদ্দিকী ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হলেও ১৯৯৯ সালে দল ছেড়ে এমপি পদ হারান। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ছাত্র সমাজে যোগদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এরশাদ তাদের বরণ করে নেন।