ধারালো অস্ত্রের কোপে জজকোর্টের অর্ডারলি মন্টুর একটি হাত বিচ্ছিন্ন : ইরানসহ গ্রেফতার তিন

পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে বিরোধ : মারামারিতে চুয়াডাঙ্গা বুজরুকগড়গড়ি ক্ষণিকের জন্য রূপ নেয় রণক্ষেত্রে

 

স্টাফ রিপোর্টার: পাওনা কিছু টাকা চাওয়া নিয়ে মারামারির সময় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে চুয়াডাঙ্গা বুজরুকগড়গড়ি বনানীপাড়ার আবু জাফর মন্টু (৪৮)। তিনি চুয়াডাঙ্গা জজ আদালতের অর্ডারলি। তার শরীরে থেকে একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মাথায় গুরুতর আঘাত হয়েছে। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা বুজরুকগড়গড়ি শান্তিপড়া স্কুলমোড়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। পুলিশ হামলাকারীদের মধ্যে মহিলাকলেজপাড়ার ইরান (২০), পলাশপাড়ার রাব্বি ও জিতুকে গ্রেফতার করেছে। রাজশাহীতে স্থানান্তরের আগে জাফর আলীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি চুয়াডাঙ্গা বুজরুকগড়গড়ি বনানীপাড়ার মৃত তেতুল শেখের ছেলে। গতরাত আড়াইটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আবু জাফর মন্টুর চিকিৎসা চলছিলো। তিনি মোবাইলফোনে কথাও বলেছেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের কয়েক সদস্য।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আবু জাফর মন্টুর ছেলে লাল্টুর একটি চায়ের দোকান আছে বুজরুকগড়গড়ি স্কুলমোড়ে। মোড়ের অদরেই কাঁচামাল নিয়ে ভ্যানের ওপর বসে ব্যবসা করেন শান্তিপাড়ার দোশর আলীর ছেলে বাবু। কাঁচামাল ব্যবসায়ী বাবুর কাছে কিছু টাকা পায় চা দোকানি লাল্টু। গতকাল সকালে লাল্টু তার পাওনা টাকা চাইতে গেলে বাবুর সাথে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে বাবুর ভ্যানটি উল্টে দেয়া হলে পাশে থাকা বাবুর ছেলে বাপ্পী খবর পেয়ে সেখানে হাজির হয়। ঘটনা শুনে সে তার কয়েক বন্ধু ইরান, রাব্বী, জিতুসহ কয়েকজনকে ডাকে। তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে চা দোকানে ছুটে যায়। রুখে দাঁড়ায় চা দোকানি লাল্টু, লাল্টুর বড় ভাইসহ তাদের পিতা আবু জাফর মন্টু। ইরানের মাথায় আঘাতও লাগে। তখন আবু জাফর মন্টুর হাতে ছিলো বড় বাটাম। এ সময় অপরপক্ষের হামলাকারীদের একজন একটি ধারালো অস্ত্র দা ছুড়ে মারে। প্রথমটি গিয়ে লাগে মাথায়। পরের ছুড়ে মারা দাটি লাগে বাম হাতে। হাতটি কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক পর্যায়ে স্থানীয়রাও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তারা সটকে পড়ে। গুরুতর জখম আবু জাফর মন্টুকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। খবর পেয়ে জেলা জজ আদালতের অনেকেই আবু জাফর মন্টুকে দেখতে হাসপাতালে উপস্থিত হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তেরের প্রক্রিয়া করেন। এরই মাঝে আবু জাফর মন্টুর জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে লাগাতার অভিযান শুরু করে। এক পর্যায়ে দুপুরে ইসলামপাড়া থেকে মহিলাকলেজপাড়ার সিরাজের ছেলে ইরান (২১), পলাশপাড়ার ইয়াজনুল ইসলাম লাভলুর ছেলে জিতুকে (২০) গ্রেফতার করা হয়। পরে ধরা পড়ে পলাশপাড়ার বাদশার ছেলে রাব্বি। গ্রেফতারের পর এদেরকে ধানা কাস্টডিতে নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আজ রোববার আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে। পুলিশ বলেছে, এ ইরানের বিরুদ্ধে এলাকার একটি হত্যা মামলাও রয়েছে।

কতো টাকা পাওনা নিয়ে মারামারি? প্রথমে স্থানীয়রা জানিয়েছেন মাত্র তিনশ টাকা পাওনা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। অবশ্য পরে আবু জাফর মন্টুর এক নিকটজন জানিয়েছেন ২০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলো ওই বাবু। সেই টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো আচরণ করাই বিরোধের সূত্রপাত ঘটে।