দামুড়হুদায় আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে ম-পগুলোতে সরব সরব ভাব

ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরা : নজরদারিতে প্রতিটি পূজাম-প
বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। এবারের পূজাকে আরও রঙিন করতে অপরূপ সুন্দর প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি বাড়তি আয়োজনও থাকবে প্রতিটি পূজাম-পে। দামুড়হুদা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উত্তম কুমার জানান, আগামী ০৪ অক্টোবর দেবীর বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজার মহোৎসব।
দামুড়হুদা উপজেলায় গত বছর ২১টি পূজাম-পে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হলেও এবার একটি বেড়ে উৎসব হবে ২২টি ম-পে। এরমধ্যে দর্শনা পৌর এলাকায় দর্শনা পুরাতন বাজার, দর্শনা আমতলা পূজাম-প, দর্শনা কেরুজ পূজাম-প, কালিদাসপুর দাসপাড়া পূজাম-প, কালিদাসপুর বাগদীপাড়া পূজাম-প, দামুড়হুদা সদরে মাতৃমন্দির পূজাম-প, দামুড়হুদা দাসপাড়া পূজাম-প, চিৎলা হালদারপাড়া পূজাম-প, গোবিন্দহুদা দাসপাড়া পূজাম-প, পুড়াপাড়া রাধামাধব মন্দির, জগন্নাথপুর পূজাম-প, ছুটিপুর সার্বজনীন শ্রী শ্রী কালিমন্দির পূজাম-প, কালিয়াবকরি পূজাম-প, বিষ্ণুপুর পূজাম-প, কার্পাসডাঙ্গা পূজাম-প, চ-িপুর পূজাম-প, কুড়–লগাছি পূজাম-প, ডুগডুগি বাজার পূজাম-প, জয়রামপুর পূজাম-প, ছোট দুধপাতিলা পূজাম-প, পারকৃষ্ণপুর পূজাম-প এবং গোপালপুর পূজাম-প এই ২২টি পূজাম-পে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
প্রতিমাশিল্পী পাবনা জেলার সোজানগর উপজেলার বাঘুলপুর গ্রামের শ্রী গোপালচন্দ্র পালের ছেলে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র শ্রী উত্তমকুমার পাল জানান, বংশ পরম্পরায় আমরা এ পেশাকে ধরে রেখেছি। বাঁশ ও খড় দিয়ে প্রতিমার অবকাঠামো তৈরির পর দক্ষহাতে মাটির প্রলেপ দেয়ার পর প্রতিমার প্রতিটি অঙ্গ নিখুঁতভাবে তৈরি করতে হয়। এরপর তাতে রঙ লাগিয়ে সুসজ্জিত করে ফুটিয়ে তুলতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া লাগে। পুরো কাজ শেষ করতে ৭ থেকে ৮ দিন করে সময় লাগে। এ বছর আমিসহ আমার বাবা শ্রী গোপালচন্দ্র পাল, ছোট ভাই শ্রী উজ্জ্বল কুমার পাল, প্রতিবেশী দাদা শ্রী জিতেন কুমার পাল এবং শ্রী লক্ষণ কুমার পাল এই ৫জন প্রতিমা তৈরি করছি। এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গার তালতলা, মুন্সিগঞ্জ, খুদিয়াখালী, বুজরুকগড়গড়ি, কুন্দিপুর পালপাড়া, কুকিয়া-চাঁদপুর, হাটবোয়ালিয়া, গাংনী বাজার, নান্দবার খালপাড় বাবুপাড়া, আমঝুপি, মহাজনপুর, দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা, চিৎলা হালদারপাড়া, দামুড়হুদা মাতৃমন্দির, দামুড়হুদা দাসপাড়া, দুধপাতিলা, বিষ্ণুপুর, কুড়–লগাছি বাজারসহ মোট ১৮টি পূজাম-পে প্রতিমা তৈরির অর্ডার নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি পূজাম-পে মাটির কাজ শেষ করা হয়েছে। রঙের কাজ বাকি রয়েছে। হাতে সময়ও বেশি নেই। বাকিদিনগুলোর মধ্যে রঙের কাজ শেষ করতে হবে। দম ফেলারও সময় পাওয়া যাবে না। এক একটি পূজাম-পে প্রতিমা তৈরির জন্য ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে চুক্তি করা হয়েছে। বছরে আড়াই মাসের মতো কাজ হয়। কালিপূজা ধরলে আরও একমাস কাজ বেশি হয়। বাকি সময় অন্যান্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তিনি আরও জানান, প্রতিমা তৈরির কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি প্রতিমা শিল্পীদের পারিশ্রমিক। কঠোর পরিশ্রম করেও সঠিক পারিশ্রমিক না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। তাই অনেকেই পূর্ব-পুরুষদের এ পেশা বদলে ইতোমধ্যেই অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। আমিসহ হাতে গোনা কয়েকজন বাপ-দাদার এ পেশা এখনও ধরে আছি।
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস জানান, ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ষষ্ঠিপূজার দিন থেকে প্রতিমা বিসর্জনের রাত পর্যন্ত এ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এজন্য থানার বিভিন্ন পূজাম-পে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। হিন্দু ধর্মালম্বীরা প্রতিমা তৈরি থেকে প্রতিমা স্থাপন পর্যন্ত সব আচার-অনুষ্ঠান যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে স¤পন্ন করতে পারে সে ব্যাপারে বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জদের নজর রাখতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত বছর এ উপজেলায় মোট ২১টি পূজাম-পে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর একটি বেড়ে মোট ২২টি পূজাম-পে শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ২২টির মধ্যে কালিদাসপুর দাসপাড়া, কালিদাসপুর বাগদীপাড়া, জগন্নাথপুর পূজাম-প, ছুটিপুর সার্বজনীন শ্রী শ্রী কালিমন্দির, কালিয়াবকরি পূজাম-প, পারকৃষ্ণপুর ও বিষ্ণুপুর পূজাম-প এই ৭টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।