দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে নিম্ন আয়ের মানুষ বাড়িঘর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন অনেকে

 

শিপলু জামান: দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের নিম্ন আয়ের মানুষ। সুদ ও চক্রবৃদ্ধি সুদের বেড়াজালে এরই মধ্যে ভিটেমাটি হারিয়েছেন অনেকে। টাকা দিতে না পারায় কয়েকটি পরিবার পালিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত হয়ে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দিনের পর দিন। আর অসাধু মহাজনদের অত্যাচারের প্রতিকারও মিলছে না কোথাও।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের নিম্ন আয়ের মানুষ নিজেদের জীবন ও জীবিকার জন্য টাকা ধার নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। সোনার গয়না, জমি, স্বাক্ষর করা ব্যাংকের চেক বই ও নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প বন্ধক রেখে সুদখোর মহাজনরা অভাবী মানুষদের টাকা দেয়। আর্থিক অনটনে ধারকর্য করে পরবর্তীতে দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ টাকা পরিশোধ করেও কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের অনেকেরই মেটেনি দেনার দায়। কখনো কখনো পাওনা টাকার দোহাই দিয়ে জব্দ করা হচ্ছে ভিটেমাটি অথবা গোয়ালের গরু।

কোলা গ্রামের ঋণ গ্রহীতা সুবাস দাস জানান, ভ্যান চালিয়ে দেনা দিতে পারছি না। অনেক ঋণ গ্রহীতা শারীরিকভাবেও লাঞ্চিত হচ্ছেন সুদখোর মহাজনদের কাছে। অত্যাচারে জমিজমা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তবে বেশির ভাগ লোকই মহাজনদের খপ্পরে পড়ে বছরের পর বছর ঋণগ্রস্থই থাকছেন। বর্তমানে নতুন ধান ঘরে তোলার আগেই দাদন ও সুদ ব্যবসায়ীদের দাপট বেড়ে চলেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার গাজীর বাজার এলাকায় তিন সুদখোর মহাজন এলাকার সহস্রাধিক মানুষের কাছে লাখ লাখ টাকা বিতরণ করেছেন। ‘চরকাকল’ নাম দিয়ে তারা এলাকায় আড়াই বছর ধরে দাদন ব্যবসা করে আসছেন। দাদন ব্যবসায়ীরা শতকরা মাসিক ১৮ থেকে ২০ টাকা হারে সুদ নিচ্ছেন।

স্থানীয় কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, চড়া সুদে টাকা নিয়ে পরিশোধ করতে না পেরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে ভারতে চলে গেছেন। এদের হাত থেকে বাঁচার কোনো উপায় মানুষের নেই। মূলত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি বিশাল জনগোষ্ঠী দিনমজুরির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। আর দরিদ্র এই জনগোষ্ঠীর নিত্য অভাব অনটনের সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু দাদন ব্যবসায়ী।

এ ব্যাপারে কোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন বলেন, দ্রুত এই সব ঘটনার তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী। কালীগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।