দর্শনায় সুইপার কলোনির শিশুরাশিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে!

 

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনার সুইপার কলোনির শিশুরা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার অক্ষরজ্ঞানে আলোকিত হতে শুরু করেছে। এ কলোনীতে বসবাসকারী শিশুদের অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিজ গণ্ডির মধ্যে রেখে প্রাক প্রাথমিক অক্ষরজ্ঞানে শিক্ষা দিতে পেরে তারা খুশি। এ পল্লির অভিভাবকরা বুঝতে পেরেছে, সন্তানদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছাতে না পারলে তারা সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে জীবনযাপন করবে।

জানা গেছে,দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার দর্শনার জনবহুল সড়কের কোল ঘেঁসে গড়ে ওঠা ৬০টি পরিবার পরিজন এ কেরু কোম্পানির সীমানার গণ্ডিতে সুইপার কলোনিতে দীর্ঘদিন ধরে পর্যায়ক্রমে বসবাস করে আসছে।এ কলোনিটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হলেও তাদের শিক্ষার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে কোনো সমাজিক প্রতিষ্ঠান কখনো এগিয়ে আসেনি। এ কলোনির নতুন প্রজন্মের ১৮ জন কোমলমতি শিশুদের মধ্যে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে ও আলোর পথ দেখাতে দর্শনার সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা মৌচাক নামের একটি সংগঠক প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। সংগঠনটি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় নাম দিয়ে এ সুইপার কলোনিতে বেড়ে ওঠা শিশুদের এ আওতায় এনে কিছু নিয়মনীতি ও শিক্ষা যাবতীয় উপক্রম দিয়ে লেখাপড়ার দ্বায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেছে।এ কলোনির সকল শিক্ষার্থীর বয়স ৫ বছর বয়সের কিছু বেশি। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত একজন শিক্ষক তাদের হাতে-কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। এ পল্লীর বসবাসকারী শিশুরা সবাই তাদের পাঠ্যবই এখন নিজেরাই পড়তে ও লেখতে পারে। এপল্লির শিক্ষার্থীরা স্কুলে লেখাপড়া করতে পেরে অভিভাবকদের মতো তারাও খুশি।

কলোনির বিদ্যালয়ে পডুয়া কুমকুম, জয়, প্রশান্ত, সোনালী, নুপুর, অন্তর, সুমা, আলো,নিশাসহ অনেকে বলে, প্রতিদিন স্যার আমাদের নানা ধরনের পড়া শেখায়। ব্লাকবোর্ডে হাতে লিখে বাংলা ও ইংরেজি অক্ষরগুলো চিনিয়ে দেয়। আমরা সবাই মিলে-মিশে রোজ সকালে বই, খাতা,কলম,পেন্সিল, কার্টার, স্কেল স্কুলের ব্যাগে ভরে স্কুলে এসে নিয়মিত পড়াশুনা করি। আমরা এখন পড়তে পারি, ছড়া বলতে পারি ও আমরা সবাই লিখতে পারি।       এ কলোনির বিদ্যালয়ের শিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন, কোমলমতি শিশুরা প্রতিদিন নিয়মিতভাবে এ বিদ্যালয়ে আসে। তাদের মেধা ভালো। তাদেরও মধ্যে শিক্ষার ইচ্ছা যথেষ্ট রয়েছে। তারা নিয়মিত ক্লাসে পড়াশুনা করে। কোনো বিষয়ে বলে দিলে তারা মনে রাখতে পারে। এদের অভিভাবকরা দরিদ্র হলেও স্কুলে লেখাপড়া করাতে পেরে অভিভাবকদের মতো তারাও খুশি। শিক্ষার্থীদের মা জোসনা, রুপা, পার্বতীসহ অনেকে খুশি মনে স্কুলে এসে তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খোঁজখবর নিতে আসেন।

এ কলোনীর সভাপতি জগদীশ বাঁশ ফোড় বলেন, এ কলোনীর সন্তানদের এ স্কুলে লেখাপড়া করতে কোনো অসুবিধা হয়না।খেটে খাওয়া দরিদ্র অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে লেখাপড়ার জন্য চরমভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়ার জন্যে সার্বিকভাবে এ সামাজিক প্রতিষ্ঠান সহযোগিতার হাত বাড়ানো কারণে তারা সবাই খুশি। তাদের দাবি কলোনিতে এভাবে সংগঠনটি তাদেরশিক্ষা প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রম চালিয়ে গেলে নতুন প্রজন্মের শিশুরা লেখাপড়া শিখতে পারবে।

মৌচাক সংগঠনের সমন্বয়কারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন এ মৌচাক সংগঠনকে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার বই, খাতা,কলম,পেন্সিল, কার্টার, স্কেল, সেলেট স্কুলের ব্যাগসহ সকল শিক্ষা উপক্রম দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে। এ কলোনির সকল শিক্ষার্থীর বয়স ৫ বছর বয়সের কিছু বেশি। এই ব্যানার থেকে শিশুদের প্রাক প্রাথমিক স্তরের এক বছর মেয়াদী অক্ষরজ্ঞান দিয়ে ও জন্ম নিবন্ধন করে কেরু কোম্পানির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়। এ কলোনির অভ্যন্তরে নিয়মিত মা সমাবেশের মাধ্যমে তাদের শিশুদের লেখা-পড়া বিষয়ে অবহিতকরণ, পাঠদান সমন্ধে আলোচনা, করণীয়,পরামর্শ ও শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো শোনা হয় এবং নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা হয়ে থাকে। গত বছর এখান থেকে ২০ জনকে কেরু কোম্পানির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়া হয়েছে। তাদের সার্বিক খোঁজখবর নেয়া হয়ে থাকে। স্থান সংকুলানের কারণে কলোনির পাশে নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে। এ কলোনিতে তিন বছর কাজ শুরু করেছে। কলোনির শিশুরা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষায় আলোকিত হতে শুরু করেছে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো- এ সমস্ত কোমলমতি শিশুদের সরকারিভাবে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য তাদের অভিভাবক ও শিশুদের উৎসাহিত করা   এবং ঝরে যাওয়া রোধ ঠেকানো।