তিন দিনের সফরে ভুটানে প্রধানমন্ত্রী

 

৫ চুক্তি ও এমওইউ সই : আজ অটিজমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

স্টাফ রিপোর্টার: তিন দিনের সরকারি সফরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভুটান গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশটির রাজধানী থিম্পুতে আজ থেকে শুরু হওয়া অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। পাশাপাশি ভুটানের রাজা জিগমে ন্যামগেল ওয়াংচুক ও প্রধানমন্ত্রী তেসেরিং তোবগের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বৈঠকও করবেন। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে জলবিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও বাণিজ্য বিষয়ে পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে প্যারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তেসেরিং তোবগে এবং থিম্পুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিষ্ণু রায় চৌধুরী সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় তাকে খাদার (স্কার্ফ) উপহার দেয়া হয়। ভুটান সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেন। বিমানবন্দর থেকে বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রাসহ প্রধানমন্ত্রীকে লা মেরিডিয়ান থিম্পু হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ভুটান সফরকালে এখানেই অবস্থান করবেন। সেখানে ভুটানের রয়েল প্রিভি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান লিয়েনপো চেনকাব দর্জি তাকে অভ্যর্থনা জানান। প্যারো বিমানবন্দর থেকে ভুটানের রাজধানীর ৭০ কিলোমিটার সড়কের দু পাশে দাঁড়িয়ে অসংখ্য মানুষ এবং শিশু-কিশোর দুই দেশের পতাকা হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান। সম্মেলন উপলক্ষে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে স্বাগত জানিয়ে রাজধানী শহরকে বাংলাদেশ ও ভুটানের পতাকা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভুটানের রাজা ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিকেলে প্রধানমন্ত্রীকে তাসিচোড জঙ্গ রাজকীয় প্রাসাদে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেয়া হয়। প্রাসাদের মূল ফটকে একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। ভুটানের রাজা জিগমে ন্যামগেল ওয়াংচুক ও রানী জেটসান পেমার সাথে ভুটানের রাজপ্রসাদে প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাত করবেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সেরিং তোবগে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে দুই দেশের মধ্যে জলবিদ্যুৎ, যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে ৬টি চুক্তি স্বাক্ষর হবে। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গেস্ট অব অনার হিসেবে যোগ দেবেন। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ভুটানের রাজা ও রানীর দেয়া ভোজে যোগ দেবেন। বিকালে শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে অটিজম ও অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্ট সমস্যার যথাযথ সমাধানে সক্ষমতা অর্জন শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করবেন। শেখ হাসিনা হেজোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করবেন। বাংলাদেশ ও ভুটানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করছে। এতে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে সূচনা ফাউন্ডেশন (সাবেক গ্লোবাল অটিজম), এ্যাবিলিটি ভুটান সোসাইটি (এবিএস) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয়। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘এএসডি ও অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যায় ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের জন্য কার্যকর ও টেকসই বহুমুখী কর্মসূচি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক, অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার বিষয়ক সরকারের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে দ্রুক এয়ারের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। বিমানবন্দরে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজ, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।