ঢাকার পশুহাটগুলোতে অধিকাংশ গরুই চুয়াডাঙ্গা কুষ্টিয়া অঞ্চলের গরু মোটা তাজা করে বিক্রিতে বিড়ম্বনা

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় কোরবানির পশুহাটগুলোতে দর্শনীয় ও চড়াদামের গরুগুলোর আধিকাংশই চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া মিরপুরের পোড়াদহ এলাকা থেকে নেয়া। কমলাপুরের ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব-সংলগ্ন বালুর মাঠ হাটে শঙ্কর জাতের যে গরুটির ১৪ লাখ টাকা দাম হাকা হয়েছে সেটাও এই এলাকারই এক খামারির।
চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া এলাকায় ঘরে ঘরে গরু মোটাতাজা করে হাটে তুলে বিগত বছরে যেহারে লাভের মুখে দেখেছেন গরুপালনকারীরা এবার তা হচ্ছে না। উপরোন্ত অনেকেই নিশ্ব হতে বসেছেন। এদেরই একজন আলমডাঙ্গা মাঝহাদের জাহিদুল। তার ১টিসহ এ গ্রামেরই খামারি হাজ্জাত আলীর দুটি গরু ঢাকায় নেয়ার পথে ট্রাকেই মারা গেছে। শুধু কি তাই, হাজ্জাত আলী শঙ্করজাতের একটি গরু দু মাস আগে ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা দামাদামি করে এক ব্যাপারির নিকট বিক্রি করেও খামারে অক্ষত রাখতে না পেরে এখন গরুটি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে। গরুটি এতোটাই মোটা তাজা হয়ে উঠেছিলো যে, নিজের ভার নিজেই সহ্য করতে না পেরে পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পায়ে ইনফেকশন দেখা দেয়। সেই থেকে গরুটি আর উঠে দাঁড়াতেই পারছে না। মাজহাদে মাথাভাঙ্গা নদীর তীরের খামারেই পড়ে গরুটি গ্রাস করছে হরেক রকমের খাবার। আর তা জোগাতেই খামারির এখন নাভিশ্বাস। কারণ আগে তাকে খাওয়ানো হতো লাভের আশায়, এখন? হতাশা। খামারি হাজ্জাত আলী তার খামারের আরো কয়েকটি গরু নিয়ে ঢাকার পশুহাটে। তার গরুগুলোর মধ্যে দুটির দাম হাকছেন পাঁচলাখের ওপরে। অবশ্য ক্রেতার অভাবে সেখানে হাজ্জাত আলীর মতো অনেকেই অনিশ্চয়তার প্রহার গুণচ্ছেন। গতকাল হাজ্জাত আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছেন, এবার গরু বিক্রি করতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। জানি না সুহালে বাড়ি ফিরতে পারবো কি-না।
আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হাজ্জাত আলীর মতো আরো অনেকেই এখন ঢাকার পশুহাটে। গরু বিক্রি করে ঈদের পূর্বরাতেই আপন ঠিকানায় ফিরবেন বলে আশায় বুক বেধে আছেন।
গরুর ১৪ লাখ টাকা দাম হেঁকেছেন এটির মালিক। তার দাবি, এটিই এ হাটের সবচেয়ে বড় গরু। গরুটির মালিক জানিয়েছেন, ১৪ লাখ টাকা গরুটির কেনা দাম। বাজার মন্দা থাকায় কেনা দাম উঠলেই এটি বিক্রি করে দেবেন তিনি। বালুর মাঠ হাট-সংলগ্ন ‘ড্যানির ফার্মে’ গিয়ে গরুটির দেখা মেলে। ওই ফার্মে মোট ১০টি গরু দেখা যায়। এর মধ্যে একই দামের আরেকটি গরু রয়েছে সেখানে। বাকি আটটি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা করে। ফার্মের দায়িত্বে থাকা মাসুদ রানা জানান, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় এক মাস আগেই তারা গরুগুলো সংগ্রহ করে এখানে এনেছেন। এখন বিক্রির অপেক্ষায় আছেন।
মাসুদ রানা জানান, কুষ্টিয়া থেকে বড় ওই গরুটি কেনা হয়। ট্রাকে করে ঢাকায় আনা, এক মাস খাওয়ানো এবং আনুষঙ্গিকসহ গরুটির পেছনে প্রায় ১৪ লাখ টাকা খরচই পড়েছে। বাজার মন্দা থাকার কারণে কেনা দামই চাইছেন তারা। এরই মধ্যে এ গরুটির দাম আট থেকে নয় লাখ টাকা উঠেছে। কেনা দাম উঠলেই ছেড়ে দেবেন এটি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে প্রচুর গরু এসেছে। কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতা কম। তাই বাজার কিছুটা মন্দা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে মানুষ এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে মনে করছেন তারা। এ ছাড়া প্রতিমাসে একটি বড় গরুর পেছনে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয় বলেও জানান তারা। চুয়াডাঙ্গা থেকে গতকাল শনিবার ওই হাটে একটি গরু নিয়ে যান মো. আলী হোসেন। তিন বছর আগে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে গরুটি কিনেছিলেন তিনি। তিন বছর ধরে লালন-পালন করেছেন এটি। গতকাল রোববার দুপুরে তিনি এটির দাম হাঁকেন সাত লাখ টাকা। গরুটির দাম চার লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে বলে জানান তিনি। কুষ্টিয়ার পোড়াদহ এলাকা থেকে আসা বোরহান উদ্দিন তার একটি গরুর দাম হেঁকেছেন আট লাখ টাকা। তিনি জানান, দিনমজুরের কাজ করলেও শখের বশে গরু পালন করেন তিনি। গতকাল এসেছেন এ হাটে। গরুটির দাম সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে বলে জানান তিনি। টাঙ্গাইল থেকে তিন দিন আগে একই বাজারে এসেছেন মো. রফিকুল ইসলাম। তিনটি বড় ষাঁড় ও একটি বলদ এনেছেন তিনি। এর মধ্যে একটি ষাঁড়ের দাম আট লাখ, অন্য দুটির প্রতিটি ছয় লাখ করে এবং বলদটির দাম তিন লাখ টাকা চাচ্ছেন তিনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও হাটসংশ্লিষ্টরা জানান, বাজারে মাঝারি ধরনের গরুর চাহিদা একটু বেশি। গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হওয়া গরুর মধ্যে মাঝারি ধরনের গরুই বেশি। এ ছাড়া ছোট গরুগুলোরও মোটামুটি চাহিদা রয়েছে। তবে বড় গরুর চাহিদা একটু কম। এবার গরুর দাম তুলনামূলক কম বলেও জানান তারা। ওই হাটের হাসিল সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা রেজাউল হক বলেন, হাটের শুরু থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হওয়া গরুর মধ্যে অধিকাংশই ছোট ও মাঝারি আকারের। তবে গত শনিবার রাতে এক লাখ ৯৭ হাজার টাকা দামের একটি গরু বিক্রি হতে দেখেছেন তিনি।