ট্যানারী মালিকদের কাছে জিম্মি মেহেরপুর জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা

 

চামড়া নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

মাজেদুল হক মানিক: কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মেহেরপুরের পশু কোরবানিকারী ও ব্যবসায়ীরা। গত বছরের চেয়ে দর কমিয়ে দেয়ায় বেচা-কেনায় হচ্ছে ছন্দপতন। দেখা দিয়েছে লবণ সঙ্কট। অপরদিকে ট্যানারী মালিকরা গত ২ বছরের চামড়া কেনার টাকা পরিশোধ না করায় পুঁজি সঙ্কটে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এসব সমস্যার কারণে চামড়া বিক্রি ও পুঁজি ফিরে পাওয়া নিয়ে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

মেহেরপুর জেলার ব্যবসায়ীরা সারা বছরই নাটোরের চামড়ার আড়তের মাধ্যমে ঢাকার ট্যানারী মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করেন। প্রতি বছর কোরবানির সময় বিপুল সংখ্যক গরু, ছাগল ও মোষ কোরবানির হয়। এবারও প্রায় ৩০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। এসব পশুর চামড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে ঢাকার ওইসকল চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে করবেন। কিন্তু গত ২ বছর চামড়া বিক্রির ১৫-২০ ভাগ অর্থ পরিশোধ করেছেন ট্যানারী মালিকরা। এতে এবারের কোরবানির ঈদে চামড়া কেনা নিয়ে পুঁজি সঙ্কটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে গত বছরের থেকে প্রতি ফুটে ১০-১৫ টাকা দাম কমিয়ে দেয়ায় এক নতুন সঙ্কট শুরু হয়েছে।

জেলার সবচেয়ে বড় চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ জানান, ট্যানারী মালিকরা ২০১৪ ও ২০১৫ সালের চামড়ার টাকা এখনো পরিশোধ করেননি। রফতানি করা চামড়ার টাকা পাওয়া যায়নি অজুহাত দেখিয়ে তারা দিনের পর দিন প্রতারণা করছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে এই শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ঋণ ও ধারদেনা করে প্রতি বছর চামড়া ক্রয় করেন। কিন্তু চামড়া বিক্রির পরও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বৃদ্ধি পাচ্ছে ঋণের পরিমাণ। এতে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাস্তায় নামার অবস্থার দিকে যাচ্ছে। ট্যানারী মালিকদের প্রতারণায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে এবার চামড়া ব্যবসায় আরেক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে লবণ নিয়ে। অতিরিক্ত দর দিয়েও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ লবণ।

চামড়া ব্যবসায়ী সানোয়ার হোসেন জানান, দেড় মাস আগে প্রতি কেজি লবণের দর ছিলো ১৮-২০ টাকা। এখন এর মূল্য ২৩-২৫ টাকা। কিন্তু বেশি দর দিয়েও লবণ পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদের দিন বিকেল থেকেই লবণ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জেলার কোথাও লবণ নেই। প্রয়োজনীয় লবণ পাওয়া না গেলে যে চামড়া কেনা হয়েছে তার ৬০ ভাগ পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিটি গরু ও মোষের চামড়ায় ৮-১০ কেজি ও ছাগলের চামড়ায় ১-২ কেজি লবণের প্রয়োজন হয়। অনভিজ্ঞরা কোরবানির পশুর চামড়া ছোলার কারণে চামড়ায় মাংস লেগে থাকে বেশি। তাই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লবণের প্রয়োজন হচ্ছে। জেলার বড় বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এবার বিপাকে। গত বছরের চেয়ে দর কমে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ চামড়া কিনতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। কোরবানিকারীরা চামড়া বিক্রি করতে অনিহা প্রকাশ করছেন। আবার কেউ কেউ বাইরের জেলায় নিয়ে বিক্রির চেষ্টা করছেন।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ)। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ টাকা। সারাদেশে খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ টাকা ফুট নির্ধারণ করা হয়। গত বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। এছাড়া প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দাম ছিলো ৩৫ থেকে ৪০ টাকা আর সারাদেশে খাসির লবণযুক্ত চামড়া ছিলো ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ছিলো ১৫ থেকে ১৭ টাকা।