ঝিনাইদহে ৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না মাটি কাটার ৭০০ নারী শ্রমিক

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার মাটি কাটায় নিয়োজিত ৬শ’ ৭০ জন নারী শ্রমিক গত ৩ মাস যাবত বেতন পাচ্ছেন না। বেশ কয়েক বছর তারা এই কাজের সাথে যুক্ত। ২ বছর হলো তাদের বেতন ঠিক সময়ে দেয়া হয় না। এবার ঈদের আগে বেতন না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। গত বছরও কুরবানি ঈদের সময় তারা বেতন না পেয়ে অসহায় ছিলেন। তারা ধারণা করছে এবার ঈদেও হয়তো বেতন না পেয়েই ঈদ করতে হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগ (এলজিইডি) জানায়, রুরাল এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড রোড মেইন্টেন্যান্স প্রোগ্রাম-২ (আরইআরএমপি-২) প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহ জেলার ৬৭টি ইউনিয়নের ৬৭০ জন নারী শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ জন করে নারী শ্রমিকের একটি করে গ্রুপ রয়েছে। এরাই গ্রামের রাস্তা গুলোতে মাটি ভরাটের কাজ করেন। এদের মধ্যে একজন সভাপতি ও একজন সাধারণ সম্পাদক আছে। তারাই সবকিছু দেখাশোনা করে। আর তাদের কাজ দেখাশোনা করেন এলজিইডির সিও (কমিউনিটি অর্গানাইজার) ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বাররা। তাদের কাজ গ্রামীণ রাস্তা রক্ষণা-বেক্ষণ করা, রাস্তার পাশে মাটি দিয়ে ভাঙন রোধ করা এবং রাস্তার ধারের জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এরা গ্রামের রাস্তার পাশে বিভিন্ন কাজ করে থাকেন।

সংশ্লিষ্ট দফতরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, ২০১৫ সালের নভেম্বরে ২ বছরের চুক্তিতে তাদের সর্বশেষ নিয়োগ দেয়া হয়। আগামী নভেম্বরে তাদের মেয়াদ শেষ হবে। এরপর আবারও নিয়োগ হবে। ওই কর্মকর্তা জানান, এই নারীরা প্রতিদিন ১৫০ টাকা চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। মাস শেষে তাদের বেতন দেয়ার কথা। প্রতি মাসে তাদের পাওনা হবে সাড়ে চার হাজার টাকা। এর মধ্যে দেড় হাজার টাকা জমা রাখা হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষে এই টাকা দেয়া হয়। আর কাজ চলা অবস্থায় প্রতি মাসের বেতন ৩ হাজার টাকা মাস শেষে তাদের হাতে দেয়ার কথা।

কিন্তু গত ২ বছর তারা ঠিকমতো বেতন পাচ্ছেন না। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোগাহাটি ইউনিয়নের ষড়াবাড়িয়া গ্রামের রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, মমতাজ বেগমের নেতৃত্বে ১০ জন নারী কাজ করছেন। এলজিইডির খোয়া ফেলা একটি রাস্তার পাশে তারা মাটি ফেলছে।

মমতাজ বেগম বলেন, স্বামী তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। দুই সন্তান নিয়ে বাবার সাতে থাকেন। ৪ শতক জমি কিনে সেখানে মাটির ঘর আর টিনের ছাপড়া করে বসবাস করেন। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ১১ বছরের ছেলে আকাশ অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখা ছেড়ে কাঠ মিস্ত্রির কাজে নেমে পড়েছে।

তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করেন। মাস শেষে টাকা পেলে সংসার চলবে। কিন্তু ৪ মাস টাকা না পেলে তারা কীভাবে বেঁচে থাকবেন? এ গ্রামের সখিনা খাতুন বলেন, মাথা গোঁজার মতো কোনো জায়গা নেই তার। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের খালের ধারে সরকারি জায়গায় ঝুপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস করেন। তার ৪ জনের সংসার এই আয়ে চলে। কিন্তু বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের ধোপাবিলা রাস্তায় কাজ করা নারী সামছুন নাহার বলেন, তার স্বামী মনির হোসেন আলমসাধু চালান। তিনি কিছু পয়সা উপার্জন করছেন, তাই বেঁচে আছেন। কিন্তু যাদের স্বামী নেই তাদের কষ্টের শেষ নেই। অনেকে ঠিকমতো খেতে না পেরে শরীরের শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। তারা ঈদের আগেই তাদের বকেয়া বেতনের দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ওই প্রকল্পের পরিচালক সালমা শহীদ বলেন, প্রকল্পের টাকা ছাড় না হওয়ায় এই বেতন দেয়া সম্ভব হয়নি। আশা করছেন ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে দিতে পারবেন। নারী শ্রমিকদের হতাশার কোনো কারণ নেই । তারা এবার ঈদের আগেই বেতন পাবে এবং ওই টাকা দিয়েই ঈদ করতে পারবেন।