ঝিনাইদহে আবাসিক হোটেলে মাদক ও দেহব্যবসা জমজমাট

ঝিনাইদহ শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অধিকাংশ আবাসিক হোটেলে দেহ ব্যবসা ও মাদকব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। ঝিনাইদহে আবাসিক হোটেলে মাদক ও দেহব্যবসা জমজমাট।

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অধিকাংশ আবাসিক হোটেলে দেহ ব্যবসা ও মাদকব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। অনেক অভিজাত এলাকার বাসাবাড়িতেও গড়ে উঠেছে মিনি পতিতালয়। হোটেলগুলোতে ঘণ্টা চুক্তিতে রুম ভাড়া দেয়া হচ্ছে। হোটেলের পক্ষ থেকে বোর্ডারদের কাছে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতায় এসব অনৈতিক ব্যবসা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশকে অর্থ দিয়ে ম্যানেজ ও তাদের অনৈতিক কাজের সুযোগ দিয়ে মাদক ও দেহ ব্যবসা চলছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঝিনাইদহের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেল আছে। এর অধিকাংশে মাদক ও নারী দেহব্যবসা চলে। এসব হোটেলের ম্যানেজার বা কর্মচারীদের সাথে মাদকব্যবসায়ী এবং ওইসব দেহ ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ রয়েছে। পুলিশের সাথে সখ্যের কারণে সব হোটেলে অভিযান চলে না। হোটেলের লোকজন খদ্দেরদের নারী ও মাদক এনে দেয়। সেখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পোশাক ও বোরখা পরে নারীরা আসে। অভিজাত পরিবারের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরাও হোটেলে সময় কাটায়। খদ্দের অনুসারে প্রতি ঘণ্টা রুম ভাড়া নেয়া হয় ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। আবার সারারাত কাটালে দেড় থেকে দু হাজার টাকা দিতে হয়। দেহ ব্যবসা প্রধান হোটেলগুলোতে শাদা পোশাকে পুলিশের তৎপরতা বেশি দেখা যায়। তারা এসে হোটেল থেকে বকশিস নিয়ে যায়। কখনও কখনও তারা বাইরে থেকে নারী নিয়ে আসে। তারা রুম ভাড়া দেয় না। অনেক হোটেলের রুম মাদক সেবন ও জুয়ার জন্যও ভাড়া দেয়া হয়ে থাকে। হোটেলের লোকজন মাদকসেবীদের চাহিদা অনুসারে ফেনসিডিল, ইয়াবা, মদসহ বিভিন্ন নেশাদ্রব্য এনে দেয়। কোনো কোনো হোটেলে অস্ত্র ব্যবসা হয় এমন নজিরও রয়েছে।

শহরের আরাপপুর, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, এইচএসএস সড়ক, হামদহ, পাগলাকানাই, গীতাঞ্জলি সড়ক, অগ্নিবীণা সড়কে অনেক নামিদামি হোটেলে দেহব্যবসা ও মাদকব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে পত্রিকায় লেখালেখির কারণে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদকসেবী ও অনৈতিক কাজে আসা নারী-পুরুষকে গ্রেফতার করেও টাকার বিনিময়ে পথিমধ্যে অনেককে ছেড়ে দেয়।মাঝে মাঝে কাউকে কাউকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নিয়ে সাজার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

ঝিনাইদহ শহরের হামদহ এলাকার হাবিবা আবাসিক হোটেলের মালিক রবিউল ইসলাম নবী বলেন, পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায় হোটেলগুলোতে দেহব্যবসা ও মাদকব্যবসা চলে। মাঝে মাঝে পুলিশ খদ্দের ও নারীদের গ্রেফতার করলেও হোটেলের মালিক বা ম্যানেজারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

জানা গেছে, শহরতলীর হামদহ স্ট্যান্ডে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন মার্কেটে হাবিবা আবাসিক হোটেল, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে হোটেল ঝিনুক, এইচএসএস সড়কে ক্ষণিকা আবাসিক হোটেল, আজাদ রেস্টহাউজ, সাহা রেস্টহাউজ, অগ্নিবীণা সড়কে নয়ন আবাসিক হোটেল, সুগন্ধা রেস্ট হাউজ, গীতাঞ্জলি সড়কে আজমিরি হোটেলসহ নামধারী আবাসিকগুলোতে দেহব্যবসা বেশি চলে। এর কোনো কোনোটিতে অস্ত্র কেনা-বেচাও চলে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও সমানতালে চলছে দেহব্যবসা। গত ৩১ আগস্ট শহরের কুষ্টিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার সততা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে শিশুকুঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের কৃষি শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক নজরুল ইসলামকে এক পতিতাসহ আটক করে পুলিশ। তাদের সহযোগিতার অভিযোগে আরও দুজনকে আটক করা হয়। তাদেরকে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।

গত ৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ হামদহ এলাকার হাবিবা আবাসিক হোটেল থেকে এক খদ্দের ও এক নারীকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে। পরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। ওই হোটেল থেকে বিপুল পরিমাণ কনডম উদ্ধার করা হয়। পুলিশি অভিযানের পর থেকে হোটেল মালিক পলাতক। এই আবাসিক হোটেলের মালিক সদর উপজেলার ঘোড়শাল ইউনিয়নের ঘোড়শাল গ্রামের মৃত রজব আলী মণ্ডলের ছেলে রবিউল ইসলাম নবী নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। তিনি খাবার হোটেল বন্ধ করে আবাসিক হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে দেহব্যবসার সাথে জড়িত বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

ঝিনাইদহ সদর থানার উপপরিদর্শক সালাহউদ্দীন আহমেদ জানান, আবাসিক হোটেলগুলোতে দেহব্যবসা ও মাদকব্যবসা বেশি হচ্ছে তা সঠিক নয়। দিনের বেলায় হোটেলে ঘণ্টা চুক্তিতে এবং বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে অনৈতিক কাজ হওয়ার অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি জানান, দেহব্যবসা ও মাদকব্যবসা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।