ঝিনাইদহের চারটি আসনে ১৫ প্রার্থীর অধিকাংশই কোটিপতি

 

ঝিনাইদহ অফিস: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহের চারটি আসনে ১৫ প্রার্থীর অধিকাংশই কোটিপতি। এর মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে স্বতন্ত্রপ্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির সর্বোচ্চ বার্ষিক আয় প্রায় ৪ কোটি টাকা। এছাড়া জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী এম. হারুন অর রশীদের ৮৮ লাখ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাইয়ের বার্ষিক আয় অর্ধকোটি টাকার ওপরে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের ৪ প্রার্থীর মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে দুজন ও স্বতন্ত্র হিসেবে একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ঝিনাইদহ-১ আসনে আব্দুল হাই ও ঝিনাইদহ-৩ আসনে শফিকুল আজম খান চঞ্চল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই পূরণ করেছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করলেও ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য সফিকুল ইসলাম অপু প্রতিশ্রুতি পূরণ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পূরণ করেননি। অন্যদিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ আবদুল মান্নান স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তা বাতিল হয়ে গেছে।

ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা): এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আব্দুল হাইয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তার হলফনামায় বার্ষিক আয় ছিলো ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। তবে চলতি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার বাৎসরিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ লাখ ৯৯ হাজার ২শ ৮৪ টাকা। গত নির্বাচনের হলফনামায় নিজ ও স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পত্তি ছিলো ১১ লাখ ৫শ টাকা ও অস্থাবর সম্পত্তি ৬ লাখ ৫৫ হাজার ২৭৬ টাকা। চলতি নির্বাচনে তার স্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছেন ১ কোটি ৬৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং অস্থাবর সম্পত্তি ১ কোটি ১৪ লাখ ২২ হাজার ১শ ৬৭টি টাকা। ২০০১ সালে জোট সরকারের আমলে বিরোধীদলের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে রাস্তা, ব্রিজ/কালভার্টে ৩০ শতাংশ, শিক্ষার উন্নয়নে ২৫ শতাংশ, গণসচেতনতা  উদ্বুদ্ধকরণে ৭০ শতাংশ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৫০ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছিলেন। তবে মহাজোট সরকারের শেষের দিকে তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে রাস্তা, ব্রিজ/কালভার্টে, বিদ্যুত ৯০ শতাংশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়নে ৯০ শতাংশ, এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে ৯০ শতাংশ প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। গত নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও চলতি নির্বাচনে কোনো মামলা নেই।

জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সমর্থিত প্রার্থী মনিকা আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসএস পাস। পেশায় তিনি গৃহিনী। স্বামীসহ তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ২৫ হাজার ৬শ ৮০ টাকা। তার অস্থাবর সম্পত্তি স্বামীসহ ১৪ লাখ টাকা এবং স্বামীর স্থাবর সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। জেপি মঞ্জু সমর্থিত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা স্বশিক্ষায় শিক্ষিত বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তার পেশা ব্যবসা। তার বার্ষিক আয় ৫ লাখ  টাকা। তার অস্থাবর সম্পত্তি ৮ লাখ টাকা এবং স্থাবর সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন ২ কোটি ৫ লাখ টাকা। ইতঃপূর্বে ১৯৭৯ সালে জাসদের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেসময় তিনি তার প্রতিশ্রুতির শতভাগ পূরণ করেছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

ওয়ার্কার্স পার্টি সমর্থিত প্রার্থী আসাদুজ্জামান স্নাতকোত্তর পাস। পেশা শিক্ষকতা। হলফনামা অনুসারে তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পত্তি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং স্থাবর সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। এ আসনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নায়েব আলী জোয়ারদারের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর তিনি রিট করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুণ্ডু): এ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. সফিকুল ইসলাম অপুর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুসারে তার বার্ষিক আয় ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৭শ ৮৬ টাকা। তার অস্থাবর সম্পত্তি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৫শ ৮ টাকা ৭৫ পয়সা এবং স্থাবর সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন ৭৮ লাখ ৮ হাজার ৯শ ২৮ টাকা ৮৪ পয়সা। তিনি গত নির্বাচনে দেয়া প্রতিশ্রতির কত শতাংশ পূরণ করেছেন তার কোনো হিসাব দেননি। এদিকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সফিকুল ইসলাম অপুর হলফনামার কোনো তথ্য নির্বাচন অফিসে পাওয়া যায়নি।

জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সমর্থিত প্রার্থী এম. হারুন অর রশিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিএ পাস। পেশা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। তার বার্ষিক আয় ৮৮ লাখ ১৭ হাজার ২শ ১৩ টাকা। তার অস্থাবর সম্পত্তি ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬২ হাজার ৬শ ৮৬ টাকা এবং স্থাবর সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ৬৭ হাজার ২শ ৬৩ টাকা। তিনি ব্যাংক ও এনজিও প্রতিষ্ঠানে সৃজনী বাংলাদেশের নিকট ৫ কোটি ২৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭শ ২৭ টাকা দেনা রয়েছেন। তার নামে দুটি মামলার মধ্যে একটি খারিজ ও একটি আপিল পর্যায়ে আছে।

স্বতন্ত্রপ্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির শিক্ষাগত যোগ্যতা মাস্টার্স অব পাবলিব এড। পেশায় ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় ৩ কোটি ৯৭ লাখ ১৮ হাজার ৫শ টাকা। তার অস্থাবর সম্পত্তি ৫ কোটি ২২ লাখ ৫২ হাজার ৫শ ৬০ টাকা বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি স্থাবর সম্পত্তির কোনো হিসাব দেননি। তবে তিনি তিনটি ব্যাংকে ৬৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা দেনা রয়েছেন।

বিএনএফ সমর্থিত প্রার্থী মোমিনুল ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। পেশায় তিনি একজন ঠিকাদার। তার বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকা। তার অস্থাবর সম্পত্তি ৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পত্তি ২৫ লাখ টাকা। তবে তিনি তিনটি ব্যাংকে ৬৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা দেনা রয়েছেন।

ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর): আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত সমর্থন প্রাপ্ত প্রার্থী নবী নেওয়াজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসএস। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। হলফনামা অনুসারে তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৪০ হাজার  টাকা। তার অস্থাবর সম্পত্তি ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পত্তি আনুমানিক ৪২ লাখ টাকা। এ প্রার্থীর নামে কোনো মামলা নেই। স্বতন্ত্রপ্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলএম। পেশায় তিনি একজন আইনজীবি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুসারে তার বার্ষিক আয় ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি তার বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছিলেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে তার অস্থাবর সম্পত্তি ১ কোটি ১২ লাখ ৭৮ হাজার ৭শ ১৯ টাকা। গত নির্বাচনে হলফনামায় ছিলো ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮শ টাকা। বর্তমানে স্থাবর সম্পত্তি ৫৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬শ টাকা। গত নির্বাচনের হলফনামায় ছিলো ৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকে গাড়ি ক্রয় বাবদ দেনা আছেন ৩৮ হাজার ৪শ ২০ টাকা। গত নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিদ্যুতায়নের ক্ষেত্রে অধিকাংশ বাস্তবায়ন করেছেন বলে দাবি করেন।

জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সমর্থিত প্রার্থী কামরুজ্জামান স্বাধীনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলএম। পেশায় তিনি আইনজীবি। তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পত্তি ২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পত্তি আনুমানিক ২ কোটি টাকা।

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের একাংশ): এ আসনে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত সমর্থন প্রাপ্ত প্রার্থী মো. আনোয়ারুল আজীম আনারের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। হলফনামা অনুসারে তার বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৪০ হাজার  টাকা। তার  ও স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পত্তি ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৮০ টাকা। স্থাবর সম্পত্তি ৩৪ লাখ ৬ হাজার ৩শ ৪০ টাকা। এছাড়া জনতা ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখায় ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭শ ৪৭ টাকা দেনা রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিগত সময়ে দুটি হত্যা, বিস্ফোরণ ও চাঁদাবাজিসহ ২০টি মামলা ছিলো। যার মধ্যে ১৪টি মামলায় খালাস ও ৫টি মামলা ডিসচার্জ হয়েছে। বিচারাধীন একটি হত্যামামলায় তিনি জামিনে আছেন।

ওয়ার্কার্স পার্টি সমর্থিত প্রার্থী মোস্তফা আলমগীরের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস। পেশায় তিনি বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ী। হলফনামা অনুসারে তার বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৬০ হাজার  টাকা। তার  ও স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পত্তি ৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পত্তি ১৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। পূবালী ব্যাংক ঢাকার মহাখালী শাখায় ১৬ লাখ টাকা দেনা রয়েছেন।

জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সমর্থিত প্রার্থী এমএম আমিরুল ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় ১ লাখ ৭৬  হাজার  টাকা। তার ও স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পত্তি ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পত্তি ৫ লাখ ২ হাজার ৬শ টাকা বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *