ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ গোপনে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা শিক্ষার্থীদের বাধায় পরীক্ষা পণ্ড : কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ

ঝিনাইদহ অফিস: কোনো আবেদনকারীকে পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি। তাদের ডেকে আনা হয়েছে মুঠোফোনে ফোন করে। ক্যাম্পাসের ফটক বন্ধ করে চলছিলো নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন না শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কোনো প্রতিনিধি। গত রোববার এভাবে অতি গোপনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ১৬ জন শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিলো। কিন্তু ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত পণ্ড হয়ে গেছে ওই আয়োজন। শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর করেছে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষ।

কলেজের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান সরকারের শেষ সময়ে কোটি টাকার বাণিজ্যের জন্য এ নিয়োগ চূড়ান্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা অতি গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষকেরাও এ বিষয়ে কিছু জানতে পারছেন না।

কলেজসূত্রে জানা গেছে, মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে এবং আরও চারটি বিষয় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলো হলো- রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ। এ চারটি বিষয়ে চারজন করে মোট ১৬ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত বছরের শেষ দিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে চলতি বছরের জুন মাসে ওই বিজ্ঞপ্তি পুনরায় প্রকাশ করা হয়। মোট ৫৪ জন প্রার্থী আবেদনপত্র জমা দেন।

কলেজের শিক্ষকেরা জানান, কলেজ পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় সে সময় চলতি বছরের ৫ মার্চ জনৈক ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান সভাপতি পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে একটি মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সভাপতির দায়িত্বের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এ অবস্থায় পদাধিকারবলে নিয়োগ কমিটির সভাপতি হয়ে সংসদ সদস্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হতে পারেন না।

এদিকে গোপনে পরীক্ষা নেয়া, নিয়োগ-বাণিজ্য ও অদক্ষ ব্যক্তিদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে কলেজের একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার সুধীজন দুপুরে কলেজে হাজির হন। তারা নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধের দাবি জানান। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়।

কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আজিম বলেন, টাকার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শেষ করে দেয়া হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান দাবি করেন, সব নিয়ম মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। ডিজির প্রতিনিধির সাথে তারা যোগাযোগ করেছিলেন, কিন্তু তিনি আসেননি।

সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, তার উপস্থিতিতেই নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছিলো এবং সেখানে শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। তিনি বলেন, ডিজির প্রতিনিধির উপস্থিতি ছাড়া নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হলে তার কোনো বৈধতা থাকে না। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হবে।