জল ঘুলিয়ে খেলেন গাংনীর মহাম্মদপুরের সেই স্কুলশিক্ষক

৫০ হাজার টাকা দেনমোহর ও ১ বিঘা জমি লিখে দিয়ে টপিকে স্ত্রীর মর্যাদা

 

গাংনী প্রতিনিধি: নানান টালবাহানা করে অবশেষে দ্বিতীয় বিয়ের পিড়িতে বসলেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার মহাম্মদপুর গ্রামের সেই আলোচিত স্কুলশিক্ষক সাইফুল ইসলাম সুমন। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর (বাকিতে) এবং ১ বিঘা জমি পন দিয়ে টপিকে দিলেন স্ত্রীর মর্যাদা এবং গর্ভের সন্তানের বৈধতা। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন দেনদরবারের মধ্যদিয়ে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখে সুমনের পরিবার। গ্রামের মানুষের দাবি ও চাপে নতি স্বীকার করে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতে রাজি হন তিনি। রাতে কনের বাড়িতে বিয়ে শেষে অনেকেই মন্তব্য করে বলেন, ‘জল ঘুলিয়ে খেলেন তিনি’।

প্রতিবেশী কৃষক আজগর আলীর স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে টপি খাতুনকে বিয়ের প্রলোভনে দেহভোগের অভিযোগ ওঠে মহাম্মদপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ধর্মীয়) ও ওই গ্রামের প্রাক্তন পুলিশ সদস্য আবুল হাশেমের ছেলে সুমন। টপি খাতুন কয়েক মাসের গর্ভবর্তী হয়ে পড়লে বিষয়টি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। টপির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রামের মানুষ বিয়ের উদ্যোগ নেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত ৯টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে কনের বাড়িতে বরযাত্রী নিয়ে পৌঁছান সাইফুল ইসলাম সুমন। অবশ্য কনের বাড়িতে আগেই বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন হয়। কনেপক্ষে একই গ্রামের তাছির উদ্দীনের ছেলে লাল্টু রহমান ও রবজেলের ছেলে ফিরোজুল ইসলাম এবং বরপক্ষে মৃত জমশেদ আলী ছেলে কুবির উদ্দীন ও বরের ভাই রিপন হোসেনকে সাক্ষী মেনে নিকাহ রেজিস্ট্রির কার্যক্রম শুরু করেন কাজি রেজাউল হক। ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর (বাকি) এবং এক বিঘা জমি পন দিয়ে টপিকে কবুল করেন সুমন। এ সময় দোয়া মোনাজাত করে তাদের দাম্পত্য জীবনের সুখ সমৃদ্ধি কামনা করেন উপস্থিত বর-কনে পক্ষের লোকজন ও গ্রামের কয়েকশ মানুষ। বিয়ে পড়ান খাইরুল ইসলাম। রাত ১০টার দিকে নতুন বউকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন বর। তবে শেষ ভালো হয়নি কনেপক্ষের। রান্না করা খাবার না খেয়েই বাড়িতে ফিরে যান বর ও বরযাত্রীরা।

বিয়ে আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত কয়েকজন জানান, আগামী বৃহস্পতিবার কনে টপি ও তার মায়ের নামে এক বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে দিবেন সুমনের পিতা আবুল হাশেম। কনের দাম্পত্য জীবনে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়েও খেয়াল রাখবেন তারা। যেহেতু টপির পিতার মৃত্যু হয়েছে তাই তার মায়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার নামেও জমি রেজিস্ট্রি হবে।

উল্লেখ্য, প্রতিবেশী আজগর আলীর স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে টপির গত সপ্তায় কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা ধরা পড়লে বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। টপি অভিযোগ করেন বিয়ের প্রলোভনে স্কুলশিক্ষক সুমন তার দেহভোগ করে। তবে এ অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে সুমন ও তার পরিবার। বিভিন্ন চাপে ও লজ্জা-ক্ষোভে সোমবার বিষপান করেন টপির পিতা। পরদিন ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আত্মগোপন করেন সুমন ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রতিবাদ ও গ্রামবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একদিকে অন্তঃসত্ত্বা অপরদিকে পিতার মৃত্যুতে অথৈ সাগরে পড়েন টপি ও তার দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা। ওইদিন থেকেই গ্রামে কয়েক দফা সালিস বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসায় গড়ায়। বিয়ে করতে রাজি হন সুমন। টপির পরিবারের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুমনকে চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।