চৌগাছার অবৈধ পশুহাট উচ্ছেদ করতে খুলনা বিভাগীয় কমিনারের নির্দেশ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পুড়োপাড়া পশুহাটটি ছিনতাই হয়ে গেছে। এই হাটে এখন আর গরু আসছে না। বাজারের গরুর খাটাল গুলো খাঁ খাঁ করছে। মস্তান দিয়ে গরুর বেপারি ও বিক্রেতাদের ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে। পুড়োপাড়া বাজারের অনতিদূরে চৌগাছার মধ্যে আরেকটি পশুহাট বসানো হয়েছে। এই পশুহাটের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। এই হাটের কারণে পুড়োপাড়াহাটে ধস নেমেছে। এদিকে চৌগাছার অবৈধ পশুহাটটি উচ্ছেদ করতে খুলনা বিভাগীয় কমিনার আব্দুস সামাদ চৌগাছার ইউএনও নার্গিস বেগমকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রায় দেড় কোটি টাকার পুড়োপাড়ার পশু হাটটি রক্ষায় প্রয়োজনে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সহায়তা গ্রহণের পরমর্শ দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার।
চৌগাছার ইউএনও নার্গিস বেগম খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, কমিশনার স্যারের নিদের্শ বাস্তবায়নে আজ বুধবার কোন ক্রমেই ঋষিপাড়ার পশুহাট বসতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য আমি চৌগাছার পৌর মেয়র নুরুদ্দীন আল মামুন হিমেলের সাথে কথা বলবো। তিনি আরও জানান, পশুহাটটি ভিন্ন দিনে বসানোর বিকল্প পথ দেখা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাটের ইজারা না পেয়ে কতিপয় সাবেক ইজারাদার পুড়োপাড়া বাজারের অনতিদূরে চৌগাছার ঋষিপাড়া নামক আরেকটি অবৈধ গরুর হাট বসিয়েছে। অবৈধ সেই পশুহাটও পুড়োপাড়া বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে রোববার ও বুধবারে করা হয়েছে। আর তাদের এই অনৈতিক কাজে সহায়তা করছে চৌগাছা থানা পুলিশ, উপজেলা ও পৌর প্রশাসন। এদের যৌথ ইন্ধন ও সরকারি দলের একাংশের পৃষ্ঠপোশকতায় একটি পুরানো পশুহাট ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে বলে পুড়োপাড়ার বাসিন্দরা মনে করেন।
ঝিনাইদহের এই পশুহাটের জন্য এ বছর পুড়োপাড়া পশুরহাটের বার্ষিক ইজারা মূল্য দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ঝিনাইদহ শহরের ওয়াহিদ সাদিক লুইস নামে এক ব্যবসায়ী পুড়োপাড়া হাটের ইজারা পেয়েছেন।
ওয়াহিদ সাদিক লুইস অভিযোগ বলেন, হাটটি নেয়ার জন্য আমি ছাড়াও ঝিনাইদহের বেপারিপাড়ার আবিদুর রহমান লালু ও চৌগাছার আনোয়ারুল ইকবাল ওরফে দেওয়ান ডাবলু অংশ নেন। উচ্চ দরদাতা হিসেবে আমি হাট পেয়েছি। আমি ন্যায্য মূল্য দিয়ে পুড়াপাড়া হাট কিনেছি। তিনি জানান, হাটের ইজারা না পেয়ে চৌগাছার একটি মহল আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে একই দিন এই অবৈধ পশুহাটটি বসিয়েছেন। লুইস আরও জানান, হাট বারের দিন বিভিন্ন পথে মস্তান ও পুলিশ বসিয়ে পুড়োপাড়া হাটে আসা গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওই হাটে। যে কারণে তার হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কেউ আসতে পারছেন না। বিষয়টি তিনি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়ে চৌগাছার ঋষিপাড়ায় বসা অবৈধ পশুহাটটি উচ্ছেদের দাবি জানয়েছেন।
পুড়োপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী জানান, তিনি হয়ে পর্যন্ত পুড়োপাড়া পশুহাটটি দেখে আসছেন। এতো বছরের পশুহাটটি ষড়যন্ত্র করে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। স্থানীয় মেম্বার আব্দুল কাদের জানান, পশুহাটটি না বসায় বাজারের সব কিছুই যেন স্থবির হয়ে পড়েছে।  কেনাকাটা কমে গেছে।
বিষয়টি নিয়ে চৌগাছা পশুহাটের ইজারাদার আনোয়ারুল ইকবাল ওরফে দেওয়ান ডাবলু জানান, হাটের স্থান পরিবর্তন করে আমরা ঋষিপাড়ায় নিয়ে এসেছি। এটা কোন অবৈধ হাট নয়। বিস্তারিত জানতে তিনি  পৌর মেয়রের সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন।
চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম হাবিব জানান, নিঃসন্দেহে এটা গর্হিত কাজ। অবৈধ হাট বসিয়ে একটি প্রতিষ্ঠিত পশুহাট ধ্বংস করা অন্যায়। তিনি অভিযোগ করেন এই অবৈধ হাট বসিয়ে কিছু মানুষ লুটপাট করে খাচ্ছে। এই টাকা কোন ফান্ডে জমা হচ্ছে না।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশাফুর রহমান জানান, হুট করে হাট বসানো যায় না। হাট বসাতে হলে সরকারের নীতিমালা মানতে হবে। কিন্তু চৌগাছার ঋষিপাড়ার পশুহাটটি অবৈধ ভাবেই বসানো হয়েছে। তিনি বলেন এই হাটটি উচ্ছেদ না করলে এলাকার পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে আমারা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিচ্ছি।
চৌগাছার ইউএনও নার্গিস বেগম প্রথম দিকে এই অবৈধ হাটের পক্ষে সাফাই গাইলেও খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশ পেয়ে এখন কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। বুধবার ঋষিপাড়ায় হাট বসানো যাবে না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। ইউএনও নার্গিস বেগম জানান, চৌগাছার হাট তো সোমবার ও শুক্রবারে বসে। কিন্তু পৌরসভা রোববার ও বুধবারে পুড়োপাড়া হাটের দিনে ঋষিপাড়ায় কেন হাট বসাচ্ছে তার সুরাহা করতে চৌগাছার পৌর মেয়রের সাথে বসবেন বলে জানান।
ইউএনও আরও জানান, বিভাগীয় কমিশনার অবৈধ পশুহাট যাতে আর না বসে সেই নির্দেশ দিয়েছেন। আমি নির্দেশনা ফলো করবো। এখানে উল্লেখ্য যে, চৌগাছা পৌরসভায় হাট বসে সোমবার ও শুক্রবার। কিন্তু গাঁয়ের জোরে ইজারাদার দেওয়ান ডাবলু পুলিশ ও মস্তানদের হাত করে বসতবাড়ি এলাকা রোববার ও বুধবারে হাট বসিয়েছেন। এই হাট থেকে উপর্জিত অর্থ সরকারি খাতে জমা হচ্ছে না। ফলে লাখ লাখ টাকা প্রশাসনের সাথে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে বলে কথিত আছে।