চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে ৪ ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ৭ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল

সমর্থক ও প্রার্থীদের পদচারণায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ ছিলো উৎসবমুখর

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুটি আসন থেকে দলীয় ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে চারজন ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ছয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। মনোয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে গতকাল মনোনয়নপত্র দাখিলের তোড়জোড়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, জাসদ মনোনীত প্রার্থী সবেদ আলী, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য শামসুল আবেদীন খোকন। আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আয়ুব হোসেন দু দিন আগে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলেও তিনি অবশ্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত আকবর আলী, জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু) মনোনীত মনজুর উল করীম, ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত সিরাজুল ইসলাম শেখ, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মীর্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লণ্টু, দর্শনা পৌরসভার সাবেক মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান ও জাকের পার্টির ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল লতিফ খান যুবরাজ।

বর্তমান সংসদ সসদ্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক তথা রিটার্নিং অফিসারের নিকট মনোনয়নপত্র দাখিলের পাশাপাশি তিনি আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকটও মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। দুপুর দেড়টার দিকে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার নিজ হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় সাথে ছিলেন সহোদর চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল মালেক, জেলা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আলমগীর হোসেন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান লিটু প্রমুখ। জাসদ মনোনীত প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা এম সবেদ আলী বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের নিকট মনোনয়নপত্র পেশ করেন। পরে তিনি আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকটও স্মারকলিপি পেশ করেন।

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত সিরাজুল ইসলাম শেখ বেলা আড়াইটার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের নিকট মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ সময় সাথে ছিলেন দাউদ হোসেন, উমর আলীসহ নেতৃবৃন্দ। বিকেল ৩টার দিকে দর্শনা পৌরসভার সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়ার রহমান জেলা প্রশাসকের নিকট মনোয়নপত্র দাখিল করেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের নিকট মনোনয়নপত্র দাখিল করেন জাকেরপার্টির ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল লতিফ খান যুবরাজ। এরপরই জেলা প্রশাসকের নিকট মনোনয়নপত্র দাখিল করেন মীর্জা সাহরিয়ার আহম্মেদ লণ্টু। সাথে ছিলেন তার এক সহোদরসহ সাবেক পিপি অ্যাড. নূরুল ইসলামসহ অনেকে।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানয়েছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল আলমডাঙ্গা উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার আবুল আমীনের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, স্বতন্ত্রপ্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ শামসুল আবেদিন খোকন, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. সোহরব হোসেন ও জাসদ মনোনীত প্রার্থী এম সবেদ আলী। মনোনয়নপত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে গতকাল আওয়ামী লীগের আলমডাঙ্গা অফিস ছিলো সরগরম। উৎসবের আমেজমুখর। গ্রামগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা অফিসে গিয়ে ভিড় জমায়। বেলা সোয়া ২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন অফিসে পৌঁছান। এরপর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে যান উপজেলা পরিষদে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার জন্য। বেলা আড়াইটার দিকে তিনি উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার আবুল আমিনের নিকট মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আওরঙ্গজেব মোল্লা টিপু, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসান কাদির গনু, পৌর সভাপতি আবু মুসা, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার, উপজেলা সহসভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মন্টু, ইউপি চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগি নূরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী অরুন, আলম হোসেন, বিআরডিবি চেয়ারম্যান মুহিদুল ইসলাস মুহিদ, মাসুদ রানা তুহিন, যুবলীগ নেতা সাজ্জাদুল ইসলাম স্বপন প্রমুখ।  এরপর মনোনয়নপত্র জমা দেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাড. সোহরাব হোসেন। এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর জাতীয় পার্টির সভাপতি শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস খোকন, আলমডাঙ্গা উপজেলা সভাপতি জাহিদ হোসেন রেন্টু, জেলা সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম, উপজেলা জাতীয় যুবসংহতির সভাপতি আব্দুর রশিদ,জেলা স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি আসাদুজ্জামান, পৌর সদস্য সচিব আতিয়ার রহমান, নজির উদ্দিন মল্লিক, রনি প্রমুখ। একই দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাসদ মনোনীত প্রার্থী জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এম সবেদ আলী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জাসদের সভাপতি মোল্লা গোলাম সরোয়ার, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, পৌর জাসদের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান, ডালিম হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, সেলিম হোসেন, রিপন হোসেন, মানোয়ার, সাবু, মিলন প্রমুখ। এরপর বিকেল ৪টার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ শামসুল আবেদীন খোকন। উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী কামাল, আওয়ামী লীগ নেতা দীপক বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি তাফসির আহমেদ লাল, অ্যাড. মখলেচুর রহমান প্রমুখ। জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল সোমবার ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে জীবননগরে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর তার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সহকারী রিটার্নিং অফিসার জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজেদুর রহমানের নিকট তিনি এ মনোনয়নপত্র জমা দেন। এমপি আলী আজগার টগর দামুড়হুদা উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো তার মনোনয়নপত্র জমা দেবেন এমন খবরে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পূর্ব থেকে উপজেলা ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন। বেলা ১টার দিকে সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক সাবেক জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মিয়া, জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উথলী ইউপি চেয়ারম্যান শরীফউদ্দীন, সহসাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু মো. আব্দুল লতিফ অমলকে নিয়ে তিনি এ মনোনয়নপত্র জমা দেন। আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গতকাল সোমবার মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে মোট ৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর ছাড়া অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মীর্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লণ্টু ও দর্শনা পৌরসভার সাবেক মেয়র দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়ার রহমান তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়াও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলা সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শেখ ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত আকবর আলী মাস্টার।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন,  চুয়াডাঙ্গা-২ (দামুড়হুদা-জীবননগর) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরসহ স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের মোট ৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ফরিদুর রহমানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় প্রস্তাবকারী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হাজি সহিদুল ইসলাম এবং সমর্থনকারী হিসেবে দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টুসহ যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এসএএম জাকারিয়া আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. রফিকুল আলম রান্টু, দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের হাজারো কর্মী সমর্থক উপজেলা পরিষদ চত্বরে ভিড় জমাতে থাকেন। হাজি আলী আজগার টগর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পৌঁছুলে তাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জাতীয় পার্টি (জেপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গ্রুপ) মনোনীত প্রার্থী দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর পুরাতন কাউন্সিলপাড়ার আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মওলা করিমের ছেলে মঞ্জুর উল করিম রুবেল দামুড়হুদায় সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টি (জাপা এরশাদ গ্রুপ) মনোনীত প্রার্থী আকবার আলী মাস্টার, ওয়ার্কার্স পার্টি (রাশেদ খান মেনন গ্রুপ) মনোনীত প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম শেখ, দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান ও মীর্জা শাহরিয়ার লণ্টু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা রিটার্নিং অফিসারের নিকট মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানান সহকারী রিটার্নিং অফিসার ফরিদুর রহমান। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আহসান হাবীব জানান, সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সদা প্রস্তুত আছি। উপজেলা নির্বাচন অফিসার আবু দাউদ জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার কাজ যথাসময়ে শেষ হয়েছে।