চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বারান্দায় দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা মৃত সন্তান নিয়ে মায়ের বুকফাঁটা কান্না

মারা গেছে সন্তান : মানতে নারাজ মা

 

কামরুজ্জামান বেল্টু: ৬ মাসের শিশু কাওছার মারা গেছে বলে চিকিৎসকেরা জানালেও মানতে না রাজ তার মা। মৃত সন্তান কোলে নিয়ে দীর্ঘ প্রায় আড়াই ঘণ্টা ঠাঁয় বসে ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বারান্দায়। শেষ পর্যন্ত শিশুসন্তানের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি আমডাঙ্গার নতিডাঙ্গায় ফিরলেও শোকার্ত মাকে কোনোভাবেই বুঝ দেয়া যাচ্ছে না।

কীভাবে কাওছারের মা বুঝ পাবেন? সকালে কাওছার একটু কষ্ট করে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো। বেলা বাড়লেই ঠিক হয়ে যাবে। এরকম আশায় তাকে তার মা কয়েকদফা বুকের দুধ দেয়ার চেষ্টা করলেন। না, কাওছার দুধ না টেনে ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়লো। তড়িঘড়ি করে তাকে তার মাসহ নিকটজনেরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলেন। বহির্বিভাগে টিকেট নিলেন। তখন ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১২টা। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুলজ্জামান মালিক খোকনের কক্ষে নেয়া হলো তাকে। চিকিৎসক শিশু কাওছারকে দেখে কালবিলম্ব না করেই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়ে ওয়ার্ডে নিতে বললেন। ওয়ার্ডে নিয়ে অক্সিজেন দেয়া হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই চিকিৎসক দেখে বললেন শিশু আর বেঁচে নেই। শিশু কাওছারের এরকম আকস্মিক মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে পড়লেন মা। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বাড়ি আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা দেবে, ঠিক এমন মুহূর্তে শিশু কাওছার নড়ে উঠলো। মায়ের মন। দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলেন তাকে। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডা. মাসুদ রানা নেড়েচেড়ে দেখে তিনি শোকার্ত মায়ের সামনে কী বলবেন তা যেন ভেবেই পাচ্ছিলেন না। ডাকা হলো শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. খোকনকে। দু চিকিৎসক নাড়ি দেখে আবারও বললেন, শিশু মারা গেছে। নড়ে ওঠার বিষয়টি ভ্রান্ত ধারণারই অংশ।

সকালে শ্বাসকষ্ট, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই হাসপাতালে মারা গেলো সন্তান। আবার নড়েও উঠলো। কীভাবে মৃত সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরবেন মা? কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছিলো না শোকার্ত মাকে। তিনি বারবারই অনুরোধ করে বলছিলেন, আমার মানিক মরেনি, ফুরায়নি। তোমরা ভালো করে চিকিৎসা দাও। ও আবার চোখ মেলবে। তাকাবে, খেলবে। হাসবে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বারান্দায় বসে দীর্ঘ প্রায় আড়াই ঘণ্টা বিলাপ করার এক পর্যায়ে বেলা আড়াইটার দিকে তাকে খানেকটা জোর করেই ফিরিয়ে নেয়া হয় বাড়ি। সন্তানের মৃত্যুতে মা বারবারই আছড়ে পড়েছিলেন মাটিতে। দৃশ্য দেখে অনেকেই ধরে রাখতে পারেনি চোখের নোনা পানি। উপস্থিত কয়েকজন বললেন, এজন্যই মা। যে মা তার সন্তানের একটু কষ্ট সহ্য করতে পারে না, সেই মাকে আমরা অনেকেই ভুলে কতো কটু কথাই না বলি। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে হলেও সকলেই নিজ নিজ মাতা-পিতার প্রতি দরদী হওয়া উচিত।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নতিডাঙ্গা গ্রামের ফিরোজ আলীর ছেলে কাওছার। ফিরোজ আলীর দু ছেলে এক মেয়ের মধ্যে কাওছার ছিলো ছোট। হঠাত করে এমন কী হলো যে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিশু কাওছার মারা গেলো? চিকিৎসকের তরফেও সদুত্তর মেলেনি। ডা. আসাদুজ্জামান মালিক খোকন বলেছেন, হাসপাতালে যখন নেয়া হয়েছে তখনই শিশুর অবস্থা ছিলো শঙ্কাটাপন্ন। বুঝে ওঠার আগেই তো শিশু মারা গেলো। শ্বাসনালীতে কিছু কি বেধেছিলো? তাও বোঝা যায়নি। চিকিৎসা দেয়ার সুযোগই তো দিলো না ৬ মাসের শিশু কাওছার।