চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন থেকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার যুবতীকে নিয়ে কৌতূহল থামেনি

স্টাফ রিপোর্টার: লিপা ওরফে লিজাকে নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা আরামপাড়ার পরিছন নেছা। তিনি গতকাল রোববার তার লেপ কাঁথা হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ সময় তিনি খানেকটা ক্ষোভেরও বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে বলেছেন, বাবারে বাবা, মেয়েটার সাথে কথায় পারা গেলো না। সত্যি কথাও বললো না। ওর বাড়ির লোকজনই বা কেমন? যে গত তিনদিনে এসে ওকে নিয়ে গেলো না?

লিপা ওরফে লিজার বয়স আনুমানিক ১৬ বছর। গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উর্ধ্বমুখি রকেট ট্রেন থেকে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে নামিয়ে দেয়া হয়। স্টেশনমাস্টার রেজাউল করীম সহকর্মীদের সহযোগিতায় একটি অটোরিকশায় তোলার চেষ্টা করেন। এ সময় চুয়াডাঙ্গা আরামপাড়ার জমসের আলীর স্ত্রী পরিছন মোবাইলফোনে টাকা রিচার্জ দিতে স্টেশনের সামনেই ছিলেন। স্টেশনমাস্টার খানেকটা জোর করেই পরিছনকে অজ্ঞান যুবতীকে হাসপাতালে নিতে বলেন। পরিছন হাসপাতালে নেন। চিকিৎসার ঘণ্টা দুয়েক পর জ্ঞান ফেরে। সেই থেকে যুবতী একেক সময় একেক রকম পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলতে থাকে। অবশ্য দু দিন পর গতকাল কিছুটা হলেও কথাবার্তায় লাগাম দিয়েছে। যদিও তার পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি থেকেই গেছে। সে বলেছে, তার পিতা ওজিউল্লাহর বাড়ি খুলনা মানিকতলায়। মা মারা গেছে ৮ বছর আগে। তিন বছর ধরে চাচাতো ভাই রানার বাড়ি যশোর খেজুরতলায় থাকতো। অপছন্দের পাত্রের সাথে বিয়ে ঠিক করলে যুবতী অভিমানে বাড়ি থেকে বের হয়। ট্রেনে ওঠে। কয়েকজন যুবক ভাব জমিয়ে পাশে বসে। কয়েক স্টেশন পরই জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালে। এ কথা শুনে পরিছনের মায়া হয়। নিজের গাট্টি থেকে টাকা খরচ করে ওষুধ কিনে দেন। বাড়ি থেকে লেপ কাঁথাও এনে যুবতীর গায়ে দিয়ে মেয়ের মতোই আদর করতে থাকেন। যুবতী তার চাচাতো ভাইয়ের মোবাইলফোন নম্বর দেয়। সেই নম্বরে পরিছনসহ অনেকেই যোগাযোগ করে যুবতীকে ফিরিয়ে নিতে বলে। গত তিন দিন ধরে আসছি আসছি বলে আসেনি। যুবতীর কথায় রহস্য ফুঁটে ওঠে। এরই একপর্যায়ে গতকাল পরিছন ক্ষুব্ধ হয়ে আদর সোহাগ প্রত্যাহার করে নেন।

গতকাল থেকে যুবতীকে দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল নামের একটি সংস্থা। হাসপাতালের সকল চিকিৎসকই যুবতীর দিকে বিশেষ নজর রাখছেন। পুলিশ কয়েক দফা খোঁজখবর নিলেও যুবতীর কথাবার্তা এলোমেলো হওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে হাল ছেড়েছে। তবে হাসপাতাল এলাকার অনেকেরই কৌতূহল বেড়েই চলেছে। গতকাল সিনেমাহলপাড়ার এক ব্যক্তি যুবতীকে যশোর পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে নিজ হেফাজতে নিতে চাইলে অনেকেই বাধ সাধেন। বলেন, যুবতী পথে বেরিয়ে ক্ষতি তো করেছেই, এখন আর নতুন করে শেয়ালের কাছে মুরগি পোশান দিতে চাইনে। অবশ্য গত তিন দিনে সমাজসেবা অধিদফতরের তেমন কেউ যুবতীর পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ হেফাজতে নেয়ারও তেমন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।