চুয়াডাঙ্গা বেগমপুরের শতাধিক চাষি ডেল্টা হাইব্রিড জাতের ভুট্টার বীজ কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ

 

নজরুল ইসলাম: চলছে ভুট্টা চাষের মরসুম। বাহারি সব মোড়কে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে ডিলাররা। বিক্রি করছেন ভুট্টার বীজ। গ্রামের সাধারণ চাষিরা স্থানীয় ডিলারদের ওপর বিশ্বাস করে কিনছেন ভুট্টার বীজ। তেমনি ডেল্টা হাইব্রিড মাইজ টেন ভি টোয়েন্টি জাতের ভুট্টার বীজ কিনে চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর গ্রামের শতাধিক চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগকারীরা বলছেনে, বীজ বিক্রেতা মেসার্স অয়ন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ডিলার শফিকুল ইসলামকে খবর দিলেও ভুক্তোভোগী চাষিদের ডাকে সাড়াদেননি তিনি। ফলে প্রতারিত হওয়া চাষিদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ। লাভরে আশায় কৃষকরা ঝুকে পড়েছেন ভুট্টাচাষের দিকে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অসাধু বীজব্যবসায়ীরা ভুট্টার ফলনের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করছেন ভুট্টার বীজ। তেমনি একজন ডিলার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের বগুলাপাড়ার আহম্মদ পরামানিকের ছেলে অয়ন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম। তিনি ডিলার নিয়েছেন ডেল্টা হাইব্রিড মাইজ টেন ভি টোয়েন্টি জাতের ভুট্টা বীজের। তার সরবরাহকৃত বীজ ইউনিয়নের কোলনী পাড়ার মনির হোসেন, আলী মিয়া, হালিম, রাশিদুল, বিপ্লব, জয়নাল আবেদিন, ছালাম, নিতু মিয়া, আমানুল্লা, সামাদ, আবুশামা, তকবিল হোসেন, আমীর হামজা, জামাল হোসেনসহ প্রায় শতাধিক কৃষক ৪৩০ টাকা কেজি দরে ২ থেকে ৭ কেজি ডেল্টা হাইব্রিড মাইজ টেন ভি টোয়েন্টি জাতের ভুট্টা বীজ ক্রয় করেন স্থানীয় দোকানি আইয়ূব আলী কাজীর ছেলে আমানুল্লাহর নিকট থেকে। বীজ বোপণের ১০ দিন অতিবাহীত হলেও ঠিকমত চারা না গজানোর কারণে চাষিরা দোকানিকে জানান। দোকানি ঘরে থাকা বীজের প্যাকেট খুলে দেখতে পান বীজে পোকা ধরা ও অপুষ্ট। বিষয়টি সাথে সাথে ডিলার শফিকুলকে জানান এবং তাকে দোকানে উপস্থিত চাষিদের সাথে দেখা করতে বলেন। অনেক চাষি শাফিকুলের নিকট মোবাইল করলেও তাতে সাড়া মেলেনি বলে জানান চাষিরা। ফলে বীজ কিনে প্রতারিত হওয়ায় চাষিদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।

উপস্থিত চাষিরা জানান, অতীতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ধারকর্জ করে ভুট্টার চাষ শুরু করেছি। শুরুতেই বিঘা প্রতি বীজ বোপণ পর্যন্ত খরচ হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। তার ওপর বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছি। এর ক্ষতিপূরণ বীজ সরবরাহকারীকেই দিতে হবে। তা না হলে আমরা আইনের আশ্রয় নেবো। এ বিষয়ে ডিলার শফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমি ডিলার না। এ ভুট্টা বীজ জীবনগরের জনৈক ছানোয়ারের নিকট থেকে নিয়ে এসেছি। বিষয়টি তাকে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার তালহা জুবায়ের মাশরুর বলেন, কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রচার প্রচারনায় বিশ্বাস করে চাষিরা বীজ কিনে থাকে। ফলে বীজ আসল, নকল, ভেজাল না নিম্নমাণের অধিকাংশ কৃষকের সেটি বোঝার ক্ষমতা নেই। সাধারণ কৃষকের এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি সিন্ডিকেট চক্র এক শ্রেণির বীজ ডিলারের যোগসাজশে নিম্নমাণের বীজ কৃষকের হাতে তুলে দিয়ে তাদের পকেট খালি করে নিজেদের পকেট ভারী করছে। যে কারণে এ অঞ্চলে বীজ নিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটেই থাকে। ফলে বিভিন্ন বীজ কোম্পানির কাছে অধিকাংশ কৃষক জিম্মি হয়ে পড়ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অপরদিকে অধিকাংশ বীজ কোম্পানি নিজস্ব ডিলারের মাধ্যমে বীজ বিক্রি করলেও কৃষকদের কোনো ক্যাশ মেমো দেয়া হয় না। ফলে কোনো কোম্পানির বীজ কিনে প্রতারিত হলে সেই কোম্পানি বা তাদের ডিলারের বিরুদ্ধে কৃষকরা কোনো অভিযোগ করতে পারেন না।

অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। দেশের খাদ্য শষ্যর চাহিদা পূরণ করে থাকে কৃষকেরা। আর তাদেরকে নিয়েই যত অবহেলা। চাষাবাদের জন্য চাষিদের বীজ, সার, কীটনাশকসহ যে সমস্থ উপকরণ তারা বাজার থেকে কিনে থাকে সে সমস্থ  উপকরণ সঠিক না বে-ঠিক তা দেখভাল করার জন্য রয়েছে জেলা উপজেলা পর্যায়ে বাজার মনিটারীং সেল। তাদের তদারকি না থাকায় প্রতিনিহত চাষিরা প্রতারিত হচ্ছে বলে ভুক্তোভোগীরা মনে করছেন। বিষয়টির প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন ভুক্তোভোগী চাষিরা।