চুয়াডাঙ্গা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতৃবৃন্দের অনুসারীদের পক্ষ অদল বদল : অনেকেরই অভিমত

ওনারা যখন যেদিকে তখন সেদিকেই বিএনপির মনোনয়ন : দরবেশের মতো দোয়ায় দোষ কী?

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা বিএনপির রাজনীতিতে বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী আবিষ্কারের কারিগর হিসেবে আলোচিত হয়ে আসছেন। এদের মধ্যে এবিএম হাসান হাসু, সরদার আলী হোসেন অন্যতম। জেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের মাথায় হাত দিয়ে এবিএম হাসান হাসুর দোয়া করার ছবি দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, দোয়ার ধরন অনেকটা দরবেশের মতোই। দরবেশরা তো সকলকেই দোয়া করেন। ক্ষতি কী?

জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীদের প্রেসবিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকার শেষ পাতায় একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একটি সভায় জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এবিএম হাসান হাসু সভাপতিত্ব করছেন, অর্থ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সেই সভায় ছিলেন প্রধান অতিথি। প্রেসবিজ্ঞপ্তির সাথে যে ছবিটি সরবরাহ করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, জাহাঙ্গীর আলমের মাথায় এবিএম হাসান হাসুর হাত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাথায় হাত দিয়ে এবিএম হাসান হাসু দোয়া করে দেন। অবশ্য গতকালই এবিএম হাসান হাসু ওই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, আমার সভাপতিত্বে ওই ধরনের কোনো সভা হয়নি। বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ বলেও দাবি করেছেন তিনি। বলেছেন, আমার ও আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিসহ ভুল বোঝানোর জন্যই করা হয়েছে। তিনি তার প্রতিবাদপত্রে আরো বলেছেন, এ ধরনের যেকোনো কর্মকাণ্ডকে আমি ঘৃণা করি। আমি আশা করি সত্য ও ন্যায়ের পথেই সাফল্যের দ্বার উন্মোচিত হয়। মিথ্যা দিয়ে কোনো সাফল্যই সম্ভব নয়।

মিথ্যুক তিনি কাকে বলেছেন? পত্রিকাকে নাকি বিবৃতিদাতা গোষ্ঠী তথা জাহাঙ্গীর আলমসহ তার অনুসারীদের? দলীয় একাধিক ব্যক্তি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, এবিএম হাসান হাসু, সরদার আলী হোসেন, রেজাউল করিম মুকুট বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী লে.কর্নেল (অব.) কামরুজ্জামানের সভা সমাবেশেই থাকছেন। জেলা বিএনপি কমিটি গঠনের সময় জেলা বিএনপির সভাপতি হাজি মো. মোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদুর সাথেই ছিলেন। অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকেও অভিন্ন কাতারেই দেখা গেছে। পরবর্তীতে তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে তুলে পক্ষভুক্ত হয়ে পড়েন। সাথে পান জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এবিএম হাসান হাসু, সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলী হোসেনসহ বেশ কয়েকজনকে। জাহাঙ্গীর আলমের সাথে সভা সমাবেশ করতেও দেখা যায়। কিছুদিনের বিরতিতে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। লে.কর্নেল (অব.) কামরুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ঘোষণা দেন। সাথে থাকেন এবিএম হাসান হাসু, সরদার আলী হোসেন, রেজাউল করিম মুকুট ও খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনাসহ বেশ কয়েকজন। জাহাঙ্গীর আলম তার নিজের মতো পৃথক অবস্থানে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, লে.কর্নেল কামরুজ্জামান তার নিজের অনুগত অনুসারীদের নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এরই মাঝে গতপরশু জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা এক প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন এবিএম হাসান হাসু জাহাঙ্গীর আলমের মাথায় হাত দিয়ে তার পক্ষে ফিরেছেন? যাকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন এবিএম হাসান হাসু।

চুয়াডাঙ্গা বিএনপি বহুভাগে ভিভক্ত। জেলা বিএনপি কমিটি গঠনের পর পাল্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দু পক্ষ পৃথকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসছে। এক পক্ষের নেতৃত্বে হাজি মো. মোজাম্মেল হক ও শামসুজ্জামান দুদু। অপরপক্ষে প্রয়াত সংসদ সদস্য সহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের সহোদর অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। তার সাথে বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা থাকলেও পরবর্তীতে তিনি অহিদুল ইসলামের পক্ষ ত্যাগ করেন। অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস যেমন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একজন, তেমনই এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদুও সেই তালিকায়। এরই মাঝে যুক্ত হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম ও লে.কর্নেল কামরুজ্জামান। তা ছাড়া আলমডাঙ্গার বিএনপি নেতা পৌর মেয়র মীর মহি উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজনের নাম এলাকার নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনায়। আর চুয়াডাঙ্গা-২ আসন? মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা যেমন বেড়েছে, তেমনই দলীয় নেতাকর্মীদের বিভেদে সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে বাড়িয়েছে হতাশা। জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য হাজি মো. মোজাম্মেল হক নিজেই প্রার্থী হবেন নাকি তার ছোট ছেলে মিথুন? এ প্রশ্ন যেমন রয়েছে, তেমনই যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা তরুণ শিল্পপতি মাহমুদুল হাসান খান বাবুর এলাকায় কয়েক বছরের মধ্যে গড়ে তোলা শক্ত অবস্থান অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলা বিএনপি একাংশের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মকলেছুর রহমান তরফদার টিপু তার অনুসারীদের নিয়ে কার্যক্রম যেমন অব্যাহত রেখেছেন, তেমনই ১৮ দলীয় জোটের মনোনয়ন জামায়াতের জেলা সহসেক্রেটারি রুহুল আমিন পাবেন বলেও তার দলীয় নেতাদের বিশ্বাস।

চুয়াডাঙ্গা বিএনপির মনোনয়ন এবং মনোনয়ন প্রত্যাশীর ইতিহাস বেশ লম্বা। ১৯৯১ সালে মিঞা মো. মনসুর আলী চুয়াডাঙ্গা-‌১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হন। তিনি নির্বাচিত হয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেরই আস্থা হারান। ১৯৯৬ সালে তাকে বাদ দিয়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান দুদুকে মনোনীত করার পক্ষে কাজ করেন তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। সাথে ছিলেন এবিএম হাসান হাসু ও সরদার আলী হোসেন। ২০০১ সালে মনোনয়ন যুদ্ধে পিছিয়ে পড়েন শামসুজ্জামান দুদু। শহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের মনোনয়ন নিশ্চিত করে বিজয়ের হাসি হাসেন এবিএম হাসান হাসু, সরদার আলী হোসেনসহ অনেকে। সহিদুল ইসলাম বিশ্বাস অসুস্থ হলেন। মারা গেলেন। তার সহোদর অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে মনোনীত করা হলো। এ সময়ও তার সাথে ছিলেন উল্লেখিত নেতারা। ওনারা যখন যেদিকে তখন সেদিকেই মনোনয়ন। রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। এতে তো বিশ্বাস বাড়তেই পারে, সেই বিশ্বাসে কেউ নিজেকে দরবেশ ভাবলে দোষের কী? আর তা ভেবে দক্ষিণা গ্রহণ তো বাড়তি পাওয়া। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অনেকেই গতকাল এরকম মন্তব্য করে বলেছেন, নিজেদের লড়াইয়ের বদলে দলকে সুসংগঠিত করার পথেই হাঁটা ভালো বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। অন্যথায় বিভক্তিই হবে ধানের শীষের পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ।