চুয়াডাঙ্গা তিতুদহ শঙ্করচন্দ্র ও বেগমপুর ইউনিয়নে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিষদ নবগঠিত তিনটিতে ওয়ার্ড সীমানা নিয়েও জটিলতা ॥ আটকে আছে ভোট

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ৩টি ভেঙে ৬টি করা ইউনিয়নের নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরেই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তিতুদহ ইউনিয়ন ভেঙে নবগঠিত তিতুদহ ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের নির্বাচনী তফশিল প্রকাশের প্রস্তুতি নেয়ার প্রাক্কালে প্রায় একই ধরনের আইনি জটিলতায় আটকে রয়েছে নির্বাচন। তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় প্রশাসক নিয়োগ করা হলেও তা উচ্চ আদালতের আদেশে হয়নি দায়িত্বের হাতবদল।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র, তিতুদহ ও বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৬ মাস আগে। এ ইউনিয়ন ৩টি ভেঙে ৬টি ইউনিয়ন গঠন গেজেটভুক্তও হয়েছে বহু আগে। দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিষদের নির্বাচন তো হচ্ছে না, নবগঠিতগুলোর নির্বাচনও আটকে রয়েছে আইনি প্যাচে। শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন ভেঙে নবগঠিত মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের অধীন দেয়া হয়েছে ১০টি গ্রাম। এ গ্রামগুলোর মধ্যে মাখালডাঙ্গা ও দীননাথপুর পোস্টঅফিসপাড়া নিয়ে ১ নম্বর, দীনানথাপুর ২ নম্বর, গাইদঘাট ৩ নম্বর, কুকিয়াচাঁদপুর ও গাাইদঘাট দক্ষিণপাড়া নিয়ে গঠিত ৪ নম্বর, উকতো ৫ নম্বর, শ্রীকোল ও দীননাথপুর চৌধুরীপাড়া নিয়ে ৬ নম্বর, হানুরবাড়াদি ৭ নম্বর, গাড়াবাড়িয়া ৮ নম্বর ও জাফরপুর ঠাকুরপুর নিয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এই ওয়ার্ড ভাগ নিয়েই দেখা দিয়েছে আইনি জটিলতা। শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নভুক্ত গ্রামগুলোর মধ্যে শঙ্করচন্দ্র ও শঙ্করচন্দ্র ইশিয়াপাড়া ১ নম্বর, শঙ্করচন্দ্র বসুতিপাড়া, শঙ্করচন্দ্র ঠাকুরপাড়া, শঙ্করচন্দ্র দোয়ারপাড়া ও শঙ্করচন্দ্র স্কুলপাড়া নিয়ে ২ নম্বর, মানিকদিহি ৩ নম্বর, ফুলবাড়ি ও জালশুকা নিয়ে ৪ নম্বর, ছয়ঘরিয়া ৫ নম্বর, বসু ভা-ারদহ ও ভা-ারদহ রোজিপুর পাড়া নিয়ে ৬ নম্বর, নতুন ভা-ারদহ ও কালী ভা-ারদহ নিয়ে ৭ নম্বর, যুগিরহুদা ও যুগিরহুদা মিলপাড়া নিয়ে ৮ নম্বর ও বহালগাছি, কিরণগাছি ও যাবদপুর নিয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে গত বছরের জুনের প্রথম সপ্তাহে। এর মধ্যে কেটে গেছে ১৬ মাস।
বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে নতুন করে গঠন করা হয়েছে নেহালপুর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের বোয়ালিয়া ১ নম্বর, নেহালপুর দক্ষিণপাড়া ২ নম্বর, নেহালপুর পূর্বপাড়া, নেহালপুর পশ্চিমপাড়া ও বোয়ালিয়া চৌধুরীপাড়া নিয়ে ৩ নম্বর, হিজলগাড়ি ও নলবিলা নিয়ে ৪ নম্বর, ডিগি ও রনগোহাইল নিয়ে ৫ নম্বর, কৃষ্ণপুর ৬ নম্বর, দোস্ত ৭ নম্বর, কুন্দিপুর ৮ নস্বর কোটালী ও দর্শনাপাড়া নিয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। বেগমপুর ইউনিয়নের আওতাভুক্ত গ্রামগুলোর মধ্যে বেগমপুর হাটপাড়া, বেগমপুর বগুলাপাড়া নিয়ে ১ নম্বর, বেগমপুর কলোনিপাড়া, বেগমপুর চিলমারিপাড়া ও বেগমপুর বিলপাড়া নিয়ে ২ নম্বর, ঝাঁজরি ৩ নম্বর, যদুপুর ৪ নম্বর, হরিশপুর, ফুরশেদপুর নিয়ে ৫ নম্বর, শোলমারী ও উজলপুর নীলমারিপাড়া নিয়ে ৬ নম্বর, উজলপুর ৭ নম্বর, আকন্দবাড়িয়া ৮ নম্বর ও রাঙ্গিয়ারপোতাকে ৯ নম্বর ওয়ার্ড করা হয়। এভাবে ওয়ার্ড ভাগ করা নিয়েও প্রশ্ন তুলে সমাধানের লক্ষ্যে আদালতের স্মরনাণাপন্নই নির্বাচনের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিতুদহ ইউনিয়ন ভেঙে নতুন করে গঠন করা হয়েছে গড়াইটুপি ইউনিয়ন। নবগঠিত ইউনিয়নের আওতাভুক্ত গ্রামগুলোর মধ্যে কালুপোল ১ নম্বর, গোষ্ঠবিহার ও খেজুরতলা ২ নম্বর, খাড়াগোদা ও জামালপুর ৩ নম্বর, গড়াইটুপি ও বিত্তিরদাড়ি নিয়ে ৪ নম্বর, তেঘরি ও কলাগছি নিয়ে ৫ নম্বর, গহেরপুর ৬ নম্বর, বাটিকাডাঙ্গা ও সুজায়েতপুর ৭ নম্বর, সড়াবাড়িয়া ও খাসপাড়া ৮ নম্বর, গবরপাড়া ও সিলিন্দিপাড়া নিয়ে ৯ নম্বর হওয়ার্ড গঠন করা হলেও বিত্তিরদাঁড়ি গহেরপুরভুক্ত করার দাবি ওঠে। তিতুদহ ইউনিয়নের আওতাভুক্ত গ্রামগুলোর মধ্যে চাঁদপুর ও নূরুল্লাপুর নিয়ে ১ নম্বর, গিরীশনগর, আড়িয়ারচোক, ৬৩ আড়িয়া ও ৬২ আড়িয়া নিয়ে ২ নম্বর, ছোটসলুয়া ৩ নম্বর, বলদিয়া মাদরাসাপাড়া, বলদিয়া কাজলপাড়া ৪ নম্বর, বলদিয়া বাইনেগাড়িপাড়া ও বলদিয়া পুরাতনপাড়া নিয়ে ৫ নম্বর, বড়সলুয়া দক্ষিণপাড়া ৬ নম্বর, বড়সলুয়া উত্তরপাড়া ৭ নম্বর, হুলিয়ামারি ৮ নম্বর ও তিতুদহ ৯ নম্বর ওয়ার্ড করা হয়। এ ইউনিয়ন পরিষদেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৬ মাস আগে। ইতোমধ্যেই এ ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ পরিষদের বিপরীতে প্রশাসক পরিষদ গঠন করে দেয়া হয়। সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিকাশ কুমার সাহকে প্রশাসক করে ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বোয়ালিয়া ব্লকের নেয়ামত হোসেন, তিতুদহ ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান, ইউনিয়ন সমাজকর্মী আসাদুল ইসলাম, গড়াইটুপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্যাসী কুমার পাল ও পরিবার পরিকল্পনার এফডাব্লিূএ শাসুন্নাহারকে সদস্য করা হয়। এ প্রশাসক পরিষদ অবশ্য দায়িত্বভার নিতে পারেনি। তার আগেই এক মেম্বারের উচ্চ আদালতের দায়ের করা রিটের প্রেক্ষিতে দেয়া আদেশ বলে পূর্বের পরিষদই দায়িত্ব পালন করছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিনটি ভেঙে ৬ ইউনিয়ন গঠন করা হলেও ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণসহ যাবতীয় সমস্যা কবে নাগাদ সমাধান হবে, কবে হবে নির্বাচন তা ইউনিয়নবাসীর কাছে রয়েছে অজানা। নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান এলাকাবাসীর।