গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেই সেকমো তানভীরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল শনিবার

অপচিকিসার শিকার আরো এক শিশুর ভবিষ্য অনিশ্চিত

গাংনী প্রতিনিধি: গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিন বছরের শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে মেহেরপুর গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক রুম থেকে অন্য রুমে ঘুরছিলেন গৃহবধূ পারভীন। খুঁজছেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) তানভীর হাসানকে। আর কাঁদছেন সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে। যাকে পাচ্ছেন তাকেই বলছেন কোথায় গেলে তার সন্তান ভালো হবে। তানভীর হাসান তার ছেলে সোহরাব হোসেনের (৩) সুন্নাতে খাৎনা করাতে গিয়ে গোপনাঙ্গের একটি রগ কেটে ফেলায় শিশুটি এখন শারীরিক চরম সমস্যায় ভুগছেন। সন্তানের উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য কোনো টাকাও নেই। অসহায় এই মা বর্ণনা দিলেন তানভীর হাসানের অপচিকিৎসার। অরদিকে স্বভোঘিত সার্জন তানভীরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ শনিবারের মধ্যে সিভিল সার্জন বরাবার দাখিল করবেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা।

অসহায় মা পারভীন খাতুনের বাড়ি গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া গ্রাম। স্বামীর নাম কামাল হোসেন। মাস দুয়েক আগে তিনি ছেলে সোহরাব হোসেনের সুন্নতে খাৎনা করানোর জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সেকমো তানভীর হাসান ও মালি রমজান আলী ৫শ’টাকার বিনিময়ে সুন্নতে খাৎনা করেন। পরদিন থেকেই শিশু সোহরাবের প্রসাব বন্ধ হয়ে গেলে বিষয়টি তানভীরকে জানানো হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তানভীর ওই শিশুটিকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের কাছে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসা দেয়ার পরও সোহরাবের অবস্থার উন্নতি হয়নি। শিশুটির পুরুষ অঙ্গের বিভিন্ন স্থান দিয়ে প্রসাব বের হতে থাকে। ওই চিকিৎসক সোহরাবের উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসায় তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। কিন্তু কিছুতেই সোহরাবের অবস্থা ভালো হচ্ছিলো না। আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু অর্থভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না সোহরাবের অতি দরিদ্র পরিবার। চিকিৎসার বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচা করেন পারভীন খাতুন। শেষ সম্বলও শেষ করেছেন। তার ছেলেটি সুস্থ হয়নি। উন্নত চিকিৎসায় ছেলে সুস্থ হওয়ার বিষয়টি চিকিৎসকরা আশা দিলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না পারভীন। তবে শিশু সোহরাবের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

এদিকে তানভীর হাসান ও মালি রমজান আলী সার্জন সেজে সাহারবাটি গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুর রাজ্জাকের গোপনাঙ্গের কাছের টিউমার অপারেশন করেন। বিনিময়ে নিয়েছিলেন ৫ হাজার টাকা। অপচিকিৎসায় গুরুতর অসুস্থ রাজ্জাক এখন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতর। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়ার কয়েকদিনেও সে সুস্থ না হওয়ায় তাকে কুষ্টিয়া রেফার করা হয়। তবে রাজ্জাকের চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করছেন তানভীর হাসান। ভুল স্বীকার করে তানভীর ওই খরচ বহন করছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন চিকিৎসক।

এদিকে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় তানভীর হাসান ও মালি রমজান আলীর অপচিকিৎসার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় দৃষ্টি পড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের। সিভিল সার্জন ডা. ইসমাইল ফারুক বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তাকে। তানভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে জানালেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. মনিরুল ইসলাম। শনিবারের মধ্যে সিভিল সার্জন বরাবর প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও প্রতিদিনই তানভীরের বিরুদ্ধে নতুন নতুন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সব অভিযোগের তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।