গাংনীর শালদহে পুলিশ কনস্টেবলের সাথে স্কুলছাত্রীর বাল্যবিয়ে পণ্ড : গোপনে বিয়ের পাঁয়তারা

 

গাংনী প্রতিনিধি: নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর সাথে সবুর হোসেন নামের এক পুলিশ কনস্টেবলের বাল্যবিয়ের আয়োজন নিয়ে এলাকায় তোলপাড়া চলছে। আইন বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত পুলিশ কনস্টেবলের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর ঘটনায় বিস্মিত সচেতন মহল। অবশ্য উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ের অনুষ্ঠান পণ্ড হয়েছে। তবে গোপনে বিয়ের পাঁয়তারায় হতবাক এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শুক্রবার দুপুরে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার শালদহ গ্রামে। পুলিশ কনস্টেবল সবুর হোসেন এ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলায় কর্মরত। চাঁদপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী শালদহ গ্রামের জাবুর আলীর মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমনার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের দিন ধার্য হয়। কনের পিতা জাবুর আলী সাধ্যমত বিয়ের আয়োজন করেন। বরযাত্রীদের জন্য প্যান্ডেলের বসার জায়গা ও তোরণ নির্মাণ করা হয়। দুপুরে বরযাত্রীদের কয়েকজন আগে থেকেই সেখানে পৌঁছায়। কিছুক্ষণ পরে বর ও বরযাত্রীরা সেখানে পৌঁছানোর কথা। দাওয়াতী আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এমন মুর্হূতেই বাল্যবিয়ে পণ্ড করে দেয় পুলিশ।

বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান বিয়ে বন্ধের উদ্যোগ নেন। ব্যবস্থা নিতে তিনি গাংনী থানার ওসিকে ফোর্স পাঠাতে বলেন। এর প্রেক্ষিতে হেমায়েতপুর পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই কৃষ্ণপদ রায় সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সেখানে গিয়ে বিয়ে বন্ধের নির্দেশ দেন। এ সময় বিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। তবে রান্নাবান্না সম্পন্ন হওয়ায় উপস্থিত আত্মীয় স্বজন ও গ্রামের লোকজনের মাঝে খাবার পরিবেশন করা হয়।

জানতে চাইলে হেমায়েতপুর পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই কৃষ্ণপদ রায় বলেন, সবুর হোসেন যেহেতু পুলিশ সদস্য তাই তাকে যথাসাধ্য বোঝানো হয়েছে। সে বাল্যবিয়ে করলে পুলিশের গায়ে চুনকালি লাগবে বলেও হুঁশিয়ারী করা হয়। এর পরেও যদি সে আইন ভঙ্গ করে তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ওই মেয়েকে যদি বিয়ে করতেই হয়, তাহলে বিয়ের উপযুক্ত বয়স পূর্ণ করেই বিয়ে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এদিকে বিয়ে পণ্ড হলেও বরযাত্রীরা ভুরিভোজ থেকে বঞ্চিত হননি। কনে পক্ষের বিশেষ অনুরোধে বিকেলে বর পক্ষের অনেকেই কনের বাড়িতে গিয়ে বরযাত্রীদের খাবার খেয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এদিকে পুলিশে কর্মরত সবুর হোসেন বাল্যবিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রতিবাদও জানান বাল্যবিয়ে নিয়ে কাজ করা বেসরকারি কয়েকটি সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। তারপরেও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিকেলে বিয়ের উদ্যোগ নেন সবুর হোসেন। চাঁদপুর গ্রামের এক কাজির কাছে বিয়ে রেজিস্ট্রির আবদার করেন। কিন্তু গ্রামের বেশ কিছু প্রতিবাদী মানুষের কারণে তা ব্যর্থ হয়। কিন্তু এতেও বাল্য বিয়ে থেকে বিরত থাকেননি সাবুর ও তার পরিবার। সন্ধ্যায় গ্রামের বাইরে গিয়ে বিয়ের উদ্যোগ নেন। সে সিদ্ধান্তে রাজি হন কনের পিতা। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত নন এলাকবাসী। বিয়ের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন তারা। তবে বাল্যবিয়ের বিষয়ে সবুর হোসেন কিংবা তার পরিবারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিয়ে বন্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপ উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান বলেন, এর পরেও যদি ওই বাল্যবিয়ে হয় তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।