গাংনীতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তুমুল আলোচনা

পল্লী বিদ্যুতের দালাল ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিম বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর পল্লি বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিস ও বামন্দী এরিয়া অফিসের দালাল নির্মূল ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিম বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে প্রশাসন। গতকাল রোববার দুপুরে গাংনী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার ঝড় শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দু-একদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে পুলিশের পাশাপাশি যৌথ অভিযান শুরু হবে বলেও উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পল্লি বিদ্যুতের দালাল পোষার অভিযোগের তীর এজিএম কমের দিকে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান মুরাদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, গাংনী থানার ওসি আকরাম হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুন্তাজ আলী, হাজি মহসিন আলী, ইউপি চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকবৃন্দ।

বক্তারা বলেন, সম্প্রতি পল্লি বিদ্যুতের গাংনী ও বামন্দী জোনাল অফিস দালালমুক্ত করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক। কিন্তু সেই সফলতা ম্লান করে দিচ্ছেন গাংনী জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (কম) সোহেল রানা, ওয়ারিং ইন্সপেক্টর ফজলু ও ফরিদসহ তাদের সঙ্গীয় কয়েকজন। তারা বেশ কয়েকজন দালালের মাধ্যমে পল্লি বিদ্যুতের নতুন সংযোগের কাজ সম্পাদন করছেন। নতুন সংযোগ প্রত্যাশীরা অফিসে দিনের পর দিন ঘুরে মিটার পাচ্ছেন না। অথচ দালালদের সাথে যোগাযোগ করে উপরি দিলেই কাঙ্ক্ষিত মিটার সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। এতে সেবা প্রত্যাশী মানুষগুলো দালালদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। মিটার স্থাপনের লক্ষ্যে এজিএম কমের পোষ্য দালালদের হাতে মিটার তুলে দেয়া হচ্ছে। গ্রাহকরা উপরি পরিশোধ করলেই এজিএম কমের নির্দেশে মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। অপরদিকে ওয়ারিং ইন্সপেক্টর ফজলুকে কোনো সময় অফিসে পায় না গ্রাহকরা। তার পোষ্য কিছু দালালের মাধ্যমে টাকার চুক্তি ছাড়া ওয়ারিং ইন্সপেকশনের কোনো কাজ হয় না। টাকা দিলেই মেলে ইন্সপেকশন। নয়তো ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। টাকার বিনিময়ে ঘরে বসে নীতিবহির্ভূত ইন্সপেকশনের অভিযোগ ওঠে ফজলুর বিরুদ্ধে।

পল্লি বিদ্যুতের মিটার কীভাবে দালালদের হাতে যায় সে বিষয়ে সভায় আলোচনার ঝড় ওঠে। কয়েকজন দালালের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন আইনশৃঙ্খলা কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য। তবে বিষয়টি কোনোভাবেই অবগত নন বলে সভায় দাবি করেন গাংনী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আবু আনাছ মোহা. নাছের। দায়ীদের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল ব্যবস্থা ও দালালমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

দালালদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও গাংনী থানার ওসি। গাংনী ও বামন্দী অফিসের চিহ্নিত কয়েকজন দালালের নাম উল্লেখ করে ওসি আকরাম হোসেন বলেন, দু-একদিনের মধ্যে এ দুটি অফিস দালাল মুক্ত করা হবে। দালালদের গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারের জন্য প্রেরণ করা হবে। এ ব্যাপারে কারো সুপারিশ শোনা হবে না।

এদিকে মোবাইলফোনের অপব্যবহার ঠেকাতে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কথা জানান ইউএনও এবং ওসি। সভায় অভিযোগ ওঠে এ উপজেলার শহর, বাজার ও গ্রামে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই অবাধে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন মোবাইল অপারেট কোম্পানির সিমকার্ড। এতে অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। মোবাইল কোম্পানির সিম বিক্রির অফারের ফাঁদ এবং বিক্রি বাড়াতে সিম বিক্রেতারা রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই সিম বিক্রি করছেন। ফলে অপরাধীদের হাতে সহজেই চলে যাচ্ছে রেজিস্ট্রেশন বিহীন সিমকার্ড। তাই রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিম বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির গতকালের সভায়। রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিম পাওয়া গেলে সেটি কোন দোকান থেকে ক্রয় করা হয়েছে তা বের করা হবে। আবার ভুয়া কাগজপত্র ও ছবি দিয়ে যদি রেজিস্ট্রেশন করা হয় সেক্ষেত্রেও দোকানিকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি করেন গাংনী থানার ওসি।

গতকালের সভায় এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়াও গাংনীর সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সার্বিক পরিস্থিতি অনেক ভালো উল্লেখ করে এটি ধরে রাখতে প্রশাসনের সকলের প্রতি আহ্বান জানান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক। খাদ্যগুদামে গম ক্রয় বন্ধের ব্যাপারেও আলোচনা হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে গুদাম চত্বরে মজুদ করা গম অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত গম ক্রয় করা যাচ্ছে না সভায় জানান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। এছাড়াও সীমান্তের চোরাচালান ও মাদক পাচার বন্ধে বিজিবিকে আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।