খুন হওয়ার আশঙ্কায় ভারত ছাড়লেন তসলিমা

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ইসলামি জঙ্গিদের কাছ থেকে ‘হুমকির মুখে’ অবশেষে ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ ভারত ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেন বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে এমনটাই বলেছেন তিনি। তসলিমা বলেছেন, বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান ও অনন্ত বিজয়কে হত্যার পর তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে জঙ্গিরা। তসলিমা তার টুইটারে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে নাস্তিক ব্লগারদের যে ইসলামপন্থিরা হত্যা করেছে তারাই হুমকি দিচ্ছে। আমি উদ্বিগ্ন। ভারত সরকারের (সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। সাক্ষাৎ পাইনি। ভারত ছাড়লাম। নিরাপদ বোধ করলেই ফিরবো।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি ‘অ্যাট জিহাদ ফর খলিফা’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে তসলিমাকে টুইট করা হয়। বলা হয়, ‘৮৪ জনের হিটলিস্টে তোমারও নাম আছে। দিন গুনতে শুরু করো।’ এ লিস্টে এর আগে অবশ্য নাম ছিলো বাংলাদেশে খুন হওয়া ওই চার ব্লগারের। ‘অ্যাট জিহাদ ফর খলিফার ওই হুমকি টুইটটি এলে ‘আনসার আল ইসলাম অ্যাট আনসার বিডি’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ফরোয়ার্ড করা হয়েছে যে, আনসার আল ইসলামের নাম উঠে এসেছে প্রতিটি ব্লগারের হত্যার পরেই। ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর থেকে তসলিমা সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন। ২০০৪ সালের আগ পর্যন্ত পর্যটক ভিসা নিয়ে তিনি ভারতে থাকতেন। ২০০৪ সাল থেকে তাকে রেসিডেন্ট পারমিট দেয়া শুরু হয়। ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার তাকে কোলকাতা থেকে তাড়িয়ে দেয়। সেই থেকে ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে ‘গৃহবন্দী’ তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার ভারতে থাকার পারমিটের মেয়াদ ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করে দেয়া হয়। ২০১১ সাল থেকে তিনি ‘পাকাপাকিভাবে’ দিল্লির বাসিন্দা। গত বছর ৫২ বছর বয়সী এই লেখিকার রেসিডেন্ট পারমিট বাতিল করে ভারত সরকার। তবে পরে আবার ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত তাকে ভারতে থাকার অনুমতি দেয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। সম্প্রতি জঙ্গিদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পাওয়ার পর একটি ইংরেজি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, এতে আমি ভীত নই। তবে যতো দিন আমি বেঁচে থাকব ততো দিন ওরা আমার মুখ বন্ধ করতে পারবে না।
এদিকে এই হুমকি বার্তা পাওয়ার পর তসলিমা নাসরিন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাথে দেখা করতে চাইলেও তার দপ্তর থেকে সাড়া পাননি। এরই মধ্যে বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক ভিত্তিক সংগঠন দা সেন্টার ফর ইনকোয়ারি (সিআইএফ)। বাংলাদেশে ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান ও অনন্ত বিজয়কে হত্যার ঘটনায় সংস্থাটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানানো হয় টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিআইএফের প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড এ লিন্ডসে বলেন, ‘তসলিমা আন্তর্জাতিকভাবে একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার সাহস ও কাজ যেকোনো বয়সের মানুষকে প্রথার বিরুদ্ধে প্রশ্ন করতে, মতবাদকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং মানবাধিকারের জন্য লড়তে অনুপ্রাণিত করে। নিউইয়র্ক-ভিত্তিক অলাভজনক এই সংগঠনটি জানিয়েছে, তসলিমা নাসরিন যদি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে থাকতে না চান তাহলে তার এ নিরাপত্তা হবে স্বল্প সময়ের জন্য। সংগঠনটি তসলিমা নাসরিনের থাকা ও খাওয়ার জন্য একটি জরুরি সহায়তা তহবিলও গঠন করেছে। তহবিলের জন্য সাহায্য চেয়ে মঙ্গলবার সদস্যদের কাছে আবেদন পাঠিয়েছে সংগঠনটি। যে সব দেশে জঙ্গি ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী মুক্ত চিন্তকদের হুমকি দিচ্ছে তাদেরও জরুরি তহবিল থেকে সহায়তা করবে সিএফআই।