কালীগঞ্জে আ.লীগ নেতা হত্যার ঘটনায় ১০ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ

হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন : বাদীকে হুমকি

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভায় হামলা ও কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনন্দ মোহন ঘোষের হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান। এ সময় কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মআহ্বায়ক ইসরাইল হোসেন, পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, নিহতের ছোট ভাই মামলার বাদী তপন ঘোষসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। এমনকি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ও কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী ঠাণ্ডুকে হত্যামামলায় হুকুমের আসামি করা হলেও পুলিশ তাদের নামে মামলা নেয়নি। বর্তমানে আসামিরা হত্যামামলাটিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। এছাড়া মামলার বাদী ও তার পরিবার আসামিদের হুমকি-ধামকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক বর্ধিতসভা শহরের পৌর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো। সভাটি উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান ইচ্ছামতো ডেকেছেন অভিযোগ এনে যুগ্মআহ্বায়ক বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের সমর্থকেরা হামলা চালান। এতে কমপক্ষে ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। ওই দিন রাতেই যশোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনন্দ মোহন ঘোষ মারা যান। খুনের তিন দিন পর নিহত আনন্দ মোহন ঘোষের ভাই তপন কুমার ঘোষ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অনিল কুমার ভদ্র, উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ইসরাইল হোসেনসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৪৯ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। যারা সবাই বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের সমর্থক।

মামলার ১নং আসামি কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন দাবি করেন, ঘটনার সময় তিনি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে কোলা বাজারে ছিলেন। মামলার অনেক আসামিই ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আনন্দ মোহন হত্যাকে পুঁজি করে একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। নিহত আনন্দ ঘোষ গত ইউপি নির্বাচনে আমার কাছে পরাজিত হন। প্রতিপক্ষ হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে শায়েস্তা করতে এ মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি প্রশাসনের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী তপন ঘোষ অভিযোগ করেন, কালীগঞ্জ থানার পুলিশ মামলা করা নিয়ে তাকে অনেক হয়রানি করেছে। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী ঠাণ্ডুকে আসামি করে মামলা দিলেও পুলিশ তা রেকর্ড করেনি। মামলার আসামিরা তাকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। তিনি ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, আনন্দ মোহন ঘোষ হত্যামামলাটি ধামাচাপা দিতে হত্যাকারীরা অপপ্রচার করছেন। তারা বলছেন, আনন্দ মোহন ঘোষ স্ট্রোক করে মারা গেছেন। এছাড়া ভাঙচুরের অভিযোগে নিহতের সমর্থকদের নামে পাল্টা একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যামামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত হত্যকারীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হবে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।