এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এ মাসেও নতুন স্কেলে বেতন অনিশ্চয়তায়

জুলাই থেকে বকেয়াসহ ২ হাজার ৪শ কোটি টাকা ছাড় দেয়নি অর্থ বিভাগ
স্টাফ রিপোর্টার: এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এ মাসেও নতুন স্কেলে বেতন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। অর্থ বিভাগের হিসাব শেষ হয়নি তাই এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের নতুন স্কেলে বেতন পাওয়া প্রলম্বিত হচ্ছে। শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন অবশ্য বলছেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ অতিরিক্ত বরাদ্দের ছাড়পত্র তারা পেতে পারেন। আর তা পেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুততার সাথে বেতন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। তবে নতুন বছরের জানুয়ারিতে নতুন স্কেলে বেতন-ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার বর্তমানে ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের নতুন স্কেলে বেতন-ভাতা দিতে অতিরিক্ত ২ হাজার ৪শ কোটি টাকা ছাড় করতে (জুলাই থেকে বকেয়াসহ) শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৬ জানুয়ারি অর্থ বিভাগের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। অর্থ বিভাগ ওই প্রস্তাবের বিচার বিশ্লেষণ ও হিসাব নিকাশ কষছে। যতোক্ষণ অর্থ বিভাগের এ কাজ শেষ না হয় ততোক্ষণ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অবশ্য একাধিকবার সাংবাদিকদের বলেছেন, একটু সময় লাগলেও বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীরা বকেয়া হিসেবে জুলাই থেকেই নতুন স্কেলে বেতন পাবেন। এতে কোনো অসুবিধা হবে না। অর্থবিভাগের সূত্র বলছে, এ খাতে প্রয়োজনীয় টাকা আছে। তবে বিষয়টি নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে, যাতে কোনো ভুলত্রুটি না থাকে। জানুয়ারিতে না হলে ফেব্রুয়ারি মাসে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা নতুন স্কেলে বেতন-ভাতা পাবেন বলে সূত্র আশা ব্যক্ত করেছে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন বেতন স্কেলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রায় ৪৪ ভাগ বেতন বেড়েছে। ফলে এ খাতে সরকারের ব্যয় বেড়েছে বছরে ৫ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। নতুন স্কেলে এমপিওভুক্ত কলেজের একজন প্রভাষকের মূল বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। বর্তমানে তারা ১১ হাজার টাকা পাচ্ছেন। সহকারী অধ্যাপকরা পাবেন ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা (ষষ্ঠ গ্রেড)। এখন পাচ্ছেন ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। আর অধ্যক্ষদের হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এতোদিন পাচ্ছিলেন ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা। আর বেসরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকের মূল বেতন হবে ১০ম গ্রেডে ১৬ হাজার টাকা। এখন পাচ্ছেন আট হাজার টাকা। আর জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকের বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। এখন পান ১১ হাজার টাকা। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের শতভাগ সরকার থেকে পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে নতুন স্কেলে বেতন-ভাতা প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। নতুন স্কেলে বেতন-ভাতা প্রদানের দাবিতে গতকাল শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের উদ্যোগে সকল জেলায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মসূচিতে শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষকরা রাজপথে নামতে চান না। তারা শ্রেণিকক্ষে তাদের দায়িত্ব পালন করতে চান। কিন্তু সরকারকে এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। একই দাবিতে আগামী ২৫ জানুয়ারি সকল জেলায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট জানিয়েছে, গত বছরের ১ জুলাই কার্যকর করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করার ঘোষণা সত্ত্বেও বাস্তবে শিক্ষক-কর্মচারীরা তা কবে হাতে পাবেন সরকারকে তা অবিলম্বে স্পষ্ট করতে হবে। এ নিয়ে আগামী ৩০ জানুয়ারি ফ্রন্টের জাতীয় কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে।