আলমডাঙ্গা বাইপাস সড়কের দু পাশের ছাল-বাকলহীন অর্জুন বৃক্ষগুলোর করুণ দশা

যেন আক্ষেপ করে বলছে জন্মই আমার আজন্ম পাপ

রহমান মুকুল: জন্মই আমার আজন্ম পাপ।’ কবি হুমায়ুন আজাদের কবিতার এ জনপ্রিয় পংক্তিটি যেন পৌণপুণিকভাবে সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে আলমডাঙ্গা বাইপাস সড়কের দু ধারের অর্জুন বৃক্ষের জীবনে। অতি স্বাস্থ্য সচেতনদের নির্মমতায় ওই সড়কের শতাধিক অর্জুন বৃক্ষ কোনো মতে আছে প্রাণ ধরিয়া।

আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গা রোডের বাইপাস সড়কের দু ধারে কড়ুই ও অর্জুন বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয় বেশ কয়েক বছর আগে। প্রায় দু শতাধিক অর্জুন  বৃক্ষের চারা ছিলো রাস্তার দু ধারে। অর্জুন বৃক্ষের নানা ঔষধি গুণাগুণ মানুষের মুখে মুখে। অর্জুন বৃক্ষকে মহৌষধি বৃক্ষ বলা হয়। এ গাছের বাকল-ফল সবই মূল্যবান ঔষধি গুণে ভরা। সে কারণে প্রাচীনকালে মানুষ অর্জুন বৃক্ষকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতো। শ্রদ্ধা করে একে গাছ না বলে বৃক্ষ বলতো। সে শ্রদ্ধা কম বেশি এখনও আছে।

এ বাইপাস সড়কে সকালে যারা মর্নিংওয়াক করেন, তাদের নিকট বেশ জনপ্রিয়। অতি স্বাস্থ্য সচেতনদের অল্প দিনেই নজরে পড়ে যায় এ সড়কের অর্জুন বৃক্ষগুলো। শুরু হয় ছোট ছোট অর্জুনের চারার ছাল-বাকল সংগ্রহ অভিযান। অল্প দিনেই অতি স্বাস্থ্য সচেতনদের আগ্রাসী নির্মমতায় সবুজ ও সতেজ এ গাছগুলো শ্রীহীন হয়ে পড়ে। ছাল-বাকলহীন দিগম্বর এ গাছগুলোর অনেকই এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ছাল বাকলহীন এ গাছের ডালগুলো পুষ্টির অভাবে প্রথমে শুকিয়ে যায়। এ সময় আরেক শ্রেণির হায়েনাদের নজরে পড়ে। এরা মাদকসেবী। লোক-চক্ষুর আড়ালে তারা এ অর্ধমরা গাছগুলো কেটে নিয়ে বিক্রি করে নেশাদ্রব্য সংগ্রহ করে। নেশাখোর এ শ্রেণির মানুষের তৎপরতায় অল্পদিনেই এ সড়কের প্রায় অর্ধেক অর্জুন বৃক্ষ ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে। অবশিষ্টগুলোর অবস্থাও করুণ। তারাও- ‘কোনো মতে আছে প্রাণ ধরিয়া।’ অর্জুন বৃক্ষগুলোর করুণ দৃশ্য দেখে নিরেট পাষাণদেরও মন খারাপ হওয়ার কথা। মহৌষধি বন্ধু যেন অকৃজ্ঞ আদম সন্তানদের সমীপে র্দীঘশ্বাস ফেলে চলেছে। যেন আক্ষেপ করে বলছে ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ।’ অথচ গোড়া থেকে গাছের চিকন ডাল অবধি ছালবাকল তুলে নেয়া এ মূল্যবান গাছগুলো একটু সচেতন হলেই আমরা বাঁচাতে পারতাম এ বৃক্ষগুলো। এ তরুবীথির তল দিয়ে চলার সময় একবারও কি আমাদের এ দায়িত্বের কথা মনে পড়ে না?