আলমডাঙ্গা তিয়রবিলায় ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছে পুলিশ

কাশেম ও তার বড়ভাই মনিরুজ্জামানকে আসামি করে মামলা : অভিযুক্তদের গাঢাকা
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: পিতার বন্ধুর লালসার শিকার আলমডাঙ্গার তিয়রবিলা গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে মুমূর্ষু অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধর্ষিত স্কুলছাত্রীকে গর্ভপাত ঘটানোর ফলে সে নেতিয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার অবস্থা মুমূর্ষু হয়ে উঠলে পুলিশের সহযোগিতায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষিত স্কুলছাত্রীর দরিদ্র পিতা বাদী হয়ে আলমডাঙ্গায় মামলা করেছেন। ধর্ষক কাশেম আলী ও তার ভাই মনিরুজ্জামান আত্মগোপন করেছেন। ধর্ষককে গ্রেফতারপূর্বক বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী।
গ্রামবাসী ও পুলিশসূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গার তিয়রবিলা গ্রামের ইব্রাহিম আলীর ছেলে আবুল কাশেম ওরফে কাশেম আলী গ্রামের এক দিনমজুরের বন্ধু। দিনমজুরের কন্যা তিয়রবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পিতার বন্ধু কাশেম আলীর কুনজরে পড়ে। ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী আবুল কাশেমের বাড়িতে স্কুলছাত্রীর পিতা কামলা খাটে। স্কুলছাত্রীর মা অসুস্থ হওয়ায় প্রায়ই তার মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতো দিনমজুর বাপ। বাড়িতে একা থাকতো সেই ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া কন্যা। বাড়িতে একা থাকা অবস্থায় নাবালিকার দেখাশোনা করার দায়িত্ব বর্তায় বাপের বন্ধু আবুল কাশেম মিয়ার (৫০) ওপর। পিতার প্রতিবেশী বন্ধু কাশেম স্কুলছাত্রীকে একা পেয়ে কয়েক দফা জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। কাউকে বললে হত্যাসহ বিভিন্ন হুমকি দেয় কাশেম। এরই একপর্যায়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ধীরে ধীরে অন্তঃসত্ত্বার বয়স বেড়ে প্রায় ৭ মাস অতিবাহিত হয়। লোকলজ্জা এবং হুমকিধামকির কারণে অসহায় হয়ে পড়ে দরিদ্র ছাত্রীর পরিবার। অপরাধ ঢাকার জন্য ধর্ষক আবুল কাশেম মিয়া গোপনে গত বৃহস্পতিবার স্কুলছাত্রীকে পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলা শহরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। পরদিন আবার ক্লিনিকে নিয়ে যায় ধর্ষকের ভাই মনিরুজ্জামান। গত শনিবার ভোরে গর্ভপাত ঘটানো হয়। কিন্তু সেই ক্লিনিকে ওই ছাত্রী অপরিণত জীবিত সন্তান প্রসব করে। ওই জীবিত সন্তান ছিনিয়ে নেয় ধর্ষক আবুল কাশেম মিয়ার বড় ভাই মনিরুজ্জামান। তবে সদ্য প্রসূত ওই সন্তান এখন কোথায় তা কেউ বলতে পারছে না। তবে এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে, পরবর্তীতে শিশু মারা যায়। মৃত শিশুকে রামদিয়া-কায়েতপাড়া এলাকায় মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছে। ধর্ষণ ও গর্ভপাতের ঘটনায় ধর্ষিত স্কুলছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে কাশেম ও তার ভাই মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন।
এদিকে স্কুলছাত্রীর গর্ভপাতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। ফলে তার অবস্থা মুমূর্ষু হয়ে উঠেছে। এমন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায়ও শিশুকন্যাটিকে বাড়িতে আটকে রাখে প্রভাবশালী ধর্ষকপরিবার। এ বিষয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গাসহ কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে গতকাল সোমবার আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আলমডাঙ্গা থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই একরাম হোসেন ও এসআই জিয়া জানান, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ায় স্কুলছাত্রী নেতিয়ে পড়েছে। তাকে সোমবার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশের সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। মুমূর্ষু শিশুকন্যাটির চিকিৎসার জন্য তার হতদরিদ্র পিতার হাতে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ খান ৫ হাজার টাকা দেন। ধর্ষক আবুল কাশেম মিয়া ও তার ভাই মনিরুজ্জামান বর্তমানে বাড়ি ছাড়া। ধর্ষকের পরিবার কর্তৃক মুমূর্ষু স্কুলছাত্রীকে কয়েকদিন ধরে বাড়িতে আটকে রাখার ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লেও তিয়রবিলা ফাঁড়ি পুলিশ রহস্যজনকভাবে নীরবতা পালন করে। অভিযোগ উঠেছে তিয়রবিলা পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মিজানের সহযোগিতায় প্রভাবশালী ধর্ষক নির্বিঘেœ গাঢাকা দিয়েছে। একই গ্রামে একই সাথে বেড়ে ওঠা